আল্লামা জালালুদ্দিন সূযূতি ( রহ.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
জালালুদ্দিন সয়ুতী নামে পরিচিত আর প্রখ্যাত তাফসীর গ্রন্থের
লেখক প্রখ্যাত এই ব্যাক্তির আসল নাম হল আব্দুর রহমান । জালালূদ্দিন হল ইনার উপাধি ।
উপনাম আবুল ফজল । পিতার নাম আবু বকর
মুহাম্মদ কামালুদ্দিন সুয়ূতি । সুয়ূতি হল একটি
শহরের নাম ।যেটা মিশরের নীল নদের পূর্ব দিকে
অবস্থিত ।এখানে ৮৪৯ হিজরীতে ১লা রজব তিনি
জন্মগ্রহন করেন ।
৮৫৫ হিজরীতে মাত্র ৫ বছর বয়সে ইনার পিতা মারা যান । পিতার ইন্তেকালের
পর উনার বাবার সাথীগণ উনার পড়ালেখার দায়িত্বভার গ্রহন করেন । বিশেষভাবে শায়খ কামালূদ্দিন
ইবনুল হুমাম হানাফী তাকে বিশেষভাবে দেখাশুনা করেন । আট বছর বয়সে পবিত্র কোরআন হিফজ
শেষ করেন । তার বালাগাত, ফিকাহ, ফারায়েজ, হাদীস, তাফসীর, তাসাউফ, আকাঈদ, চিকিৎসাশাস্ত্র ইত্যাদি
বিষয়ে জ্ঞান নেন । তিনি বলেন “আমি হজের সময় এ নিয়তে জমজম কূপর পানি পান করেছি যে, ফিকাহ
শাস্ত্রে শায়খ সিরাজউদ্দিন বালকীনী আর হাদিস শাস্ত্রে হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানীর পর্যায়ে
পৌছাতে পারি । তিনি আরো বলেন আল্লাহ তায়ালা আমাকে সাতটি শাস্ত্রে তথা হাদিস, তাফসীর,
ফিকাহ, নাহু, মা’আনী, বয়ান, এবং শাস্ত্রে বুৎপত্তি দান করেছেন ।
ইলম শেখার জন্য তিনি বহু দেশ সফর করেছেন । বহু উস্তাদ এর সংস্পর্শ
পেয়েছেন । জানা যায় তিনি প্রায় ৫০০ উস্তাদ ও শায়খের কাছ থেকে জ্ঞান নিয়েছেন ।
আল্লামা সূয়ূতি রহ. ছাত্রজীবন শেষ করার পর হিজরী ৮৭০ সনে ফতওয়া
দেয়ার কাজ শুরু করেন । ৮৭২ সনে ফতওয়া লেখার
কাজ শুরু করেন । তিনি প্রয় ৫০০শথ গ্রন্থ রচনা করেছেন । ৪০ বছর বয়সে তিনি বিচার কাজ
ও ফতওয়ার কাজ থেকে অব্যাহতি নিয়ে নির্জনতা অবলম্বন গ্রহন করেন । রিয়াজত, মুজাহাদা,
ইবাদত, ও হেদায়াতের কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন । পরহেগারিতার ব্যাপারে তিনি এমন পথ
অবলম্বন করেন যে, বিভিন্ন সময় আমীর এবং ধনাঢ্য ব্যাক্তির কাছ থেকে কোন হাদিয়া বা উপঢৌকোন
আসলে তিনি তা নিতেন না । একবার সুলতান ঘোরী উনার জন্য উপঢৌকন হিসেবে একহাজার স্বর্ণমুদ্রা
ও একজন গোলাম পাঠালে তিনি গোলামকে আযাদ করে রাসূলে করিম ( দরূদ ) এর হূজরা মোবারকের
খাদিম হিসেবে পাঠিয়ে দেন আর স্বর্ণমুদ্রা ফেরত পাঠান ।
তিনি একজন বড় মাপের কবিও ছিলেন । অসংখ্য কবিতা লিখেছেন । বড়মাপের
ওলিও ছিলেন । এ ব্যাপারে তার একটা কারামত প্রসিদ্ধ যে, তার বিশেষ খাদেম মুহাম্মদ ইবনে
আলী হাব্বাক বর্ণনা করেন যে, একদিন দুপুরে খাবারের পর তিনি বললেন যে, তুমি যদি আমার
মৃত্যু অব্দি এ কথা কাউকে না বলো তবে আমি তোমাকে আজ আসরের নামাজ মক্কা শরীফে পড়ার ব্যবস্থা
করে দেব । খাদেম রাজী হলেন । সূয়ূতী রহ. তাকে চোখ বন্ধ করতে বললেন এবং ২৭ কদম যাবার
পর চোখ খুলতে বললেন । চোখ খুলে দেখলেন উনারা মক্কায় বাবে মুয়াল্লায় হাজির । অত:পর হেরেম
শরীফ পৌছে তাওয়াফ করলাম এবং জমজমের পানি পান করলাম । তারপর তিনি বললেন আমাদের জন্য
জমিন সংকোচিত হয়ে গেছে । এতে আশ্চর্যবোধ কর না । হেরেমের আশেপাশে মিশরের আমাদের অনেক
পরিচিত লোক আছে তুমি চাইলে তাদের সাথে আসতে পার আর নয়ত আমার সাথে যেতে পার । আমি বললাম
আমি আপনার সাথেই যা । তারপর আমি আবার চোখ বন্ধ করলাম এবং ৭ কদম যাবার পর চোখ খুলে দেখলাম
আমারা মিশরে পৌছে গেছি ।
0 comments:
Post a Comment