কোন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার পিতা-মাতা, এবং তার সন্তান ও সমস্ত মানুষ থেকে আমাকে বেশি মোহাব্বত করবে। {সহীহ বুখারী শরিফ, হাদীস নং-১৫, সহীহ মুসলিম শরিফ, হাদীস নং-১৭৭}

Thursday, April 11, 2019

মদিনা সনদ প্রতিষ্ঠায় প্রথম বায়াতের ঘটনা ।



ইসলাম এবং রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় মদিনা সনদের পদক্ষেপ সমূহ
হুজুর আকরাম নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলাম প্রচারে তাঁর দাওয়াতি কর্মকে যতোটুকু সম্ভব প্রসারিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন। মক্কায় বিভিন্ন মেলা ও সামাজিক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত জনসাধারণের প্রতি তার দাওয়াতি কর্ম অব্যাহত রাখেন। যার ফলে মক্কার কাফেররা বাইরের লোকদের কাছে তাঁর ইমেজ নষ্ট করার জন্য এবং তাঁর থেকে দূরে রাখার চেষ্টায় লিপ্ত থাকতো। তাদের এই নেতিবাচক কর্মকান্ড একদিক থেকে ইসলামের প্রচার ও প্রসার কে ত্বরান্বিত করে এবং হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিচিতি কে বিস্তৃতি করে দেয় ।

মদিনা সনদ পর্ব-০২


নবুওয়াতের দশম সনে হজ্জের সময় এক রাতে হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরবের বিভিন্ন গোত্রের কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্যে বের হন। আকাবা নামক স্থানে খাযরাজ গোত্রের কিছু লোকের সাথে দেখা হলে তিনি তাদের পরিচয় জানতে চান। তারা নিজেদের খাযরাজগোত্রের লোক বলে পরিচয় দেয়। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন আপনারা কি ইহুদীদের প্রতিবেশী ?তারা বলল হা। তাদের সাথে পরিচয় গো প্রাথমিক আলাপচারিতায় হুজুর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম  প্রকৃত অর্থে মদিনা শরীফের পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং সেখানকার বিভিন্ন গোত্র সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য গুলি জানতে পারেন। হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাদেরকে ইসলামের প্রতি আহবান করেন এবং কুরআন পড়ে শোনান। পবিত্র কোরআনের বাণী শুনে তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি দারুন দারুণভাবে  মোহিত হন। আর সে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি ছিলেন হযরত  ইয়াস বিন মু’য়াজ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু । তিনি তাঁর সব গোত্রের লোকদের বলেন আল্লাহ  শপথ তোমরা এখানে যে উদ্দেশ্যে এসেছ তারচেয়ে দাওআত অনেক উত্তম। কিন্তু প্রতিনিধিদলের প্রধান তার কথায় প্রকাশ করল না, তবে হযরত  ইয়াস বিন মু’য়াজ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ইসলাম কবুল করেন। কোন কোন বর্ণনা অনুযায়ী প্রতিনিধিদলের সদস্যরা আরজ করেন যে, এখন আমাদের আউস ও খাযরাজ গোত্রের মধ্যে যুদ্ধ চলতেছে। যদি এ মুহূর্ত আপনি মদীনা শরীফে আগমন করেন, তবে উভয় গোত্র বাই’আত গ্রহণে সম্মত হবে না। যদি আপনি একটি বছর অপেক্ষা করেন এবং এর মধ্য উভয় গোত্র যুদ্ধ-বিগ্রহ ছেড়ে সন্ধিতে আবদ্ধ হয়, আউস ও  খাযরাজ একত্রিত হয়ে ইসলাম কবুল করবে। আগামী বছর আমরা আবার আসবো এবং তখন এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে । (তাবাকাতে ইবনে সাদ)

ইসলামের মর্মবাণী শোনার পর উক্ত প্রতিনিধিদলের সদস্যরা এই সত্যটুকু অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে, তিনিই  সর্বশেষ নবী। যার ব্যাপারে  ইহুদিরা প্রায় বলাবলি করত । তারা ইহুদিদের পূর্বে জানার অদম্য ইচ্ছা নিয়ে হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আহবানে সাড়া দিয়ে  ঈমান আনেন। এবং ইয়াসরিবকে ইসলামের কেন্দ্র বানানোর লক্ষ্যে সেখানে হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রথম প্রতিনিধি দল হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। যাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ইয়াসরিব  এ আনসারীদের ঘরে ঘরে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিল।

আকাবার প্রথম বায়াত
 নবুওয়াতের  এগারতম বর্ষে বার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল তাদের কৃত ওয়াদা অনুযায়ী মক্কায় হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে দেখা করতে আসেন।বার জনের মধ্য সাতজন ব্যতীত বাকি পাঁচজনের সাথে এর আগের বছর ও হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাক্ষাৎ হয়েছিল। তারা সবাই হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র হাতে বায়াত গ্রহণ করেন যেটা পৃথিবীর ইতিহাসে আকাবার প্রথম শপথ হিসেবে বিখ্যাত।

 বায়াত গ্রহণ কারী সম্মানিত সাহাবীগণ যারা ছিলেন
১. হযরত আবু উমামাহ  আসাদ বিন যুরারাহ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু
২. হযরত আওফ বিন হারেছ  রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু
৩. হযরত রাফে বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু
৪. হযরত উয়াইম বিন ছা’য়দাহ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু
৫. হযরত আবু হাইসাম মালিক বিন তাহইয়ান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু
৬. হযরত আব্বাস বিন উবাদাহ রাদি আল্লাহ তাআলা আনহু
৭. হযরত উবাদাহ বিন চামেত রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু
৮. হযরত খালেদ বিন মাখলাদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু
৯. হযরত যাকওয়ান বিন কাইছ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু
১০. হযরত মুয়াজ বিন হারাছ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু
১১. হযরত কুতাইয়াহ্ বিন আমের বিন হাদিদাহ্ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু
১২. হযরত উকবাহ্ বিন আমের রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু

হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের কাছ থেকে এই বিষয়ে  বায়াত গ্রহণ করেন
১. আমরা এক আল্লাহর ইবাদত করব এবং তাঁর সাথে কাউকে শরিক করব না
২. চুরি করা থেকে বিরত থাকব
৩. ব্যভিচার করব না।
৪. সন্তান সন্ততি বিশেষ করে কন্যা সন্তানকে  হত্যা করবো না।
৫. কারো ওপর মিথ্যা অপবাদ দেবো না।
৬. কুৎসা রটনা ওপর নেতা থেকে বিরত থাকব।
৭. সকল কাজে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আনুগত্য করব।

 আকাবার প্রথম আয়াত অনুষ্ঠানে যেসব বিষয়ের উপর বায়াত গ্রহণ করা হয়, তা মদিনা শরীফের একটি ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার ভিত্তি রচনা করে দেয়। উত্তর প্রতিনিধি  দলের কাছ থেকে একদিকে যেমন ইয়াসরিবের এর সকল পাপাচার, অত্যাচার সমূলে উৎখাত করার অঙ্গীকার নেয়া হয়েছিল অনুরূপভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের ওয়াদা ও নেয়া হয়েছিল। বায়াতের মদীনা শরীফে ফেরার সময় প্রতিনিধিদলের সদস্যরা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর নিকট তাদেরকে দ্বীন শিক্ষা দেয়ার জন্য তাদের সাথে একজন শিক্ষক প্রেরণের আবেদন পেশ করেন। তিনি তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং হযরত মাসয়াব বিন উমাইয়া রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুকে তাদের সাথে প্রেরণ করেন। এবং তিনি ইয়াসরিবের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি হযরত আস'আদ বিন যুরারাহ  রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর ঘরে অবস্থান করেন। হযরত মাসয়াব  বিন উমাইররাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মদিনা থেকে  কুবা পর্যন্ত ইসলাম প্রসার লাভ করে।আউস গোত্র প্রধান হযরত সা’আদ  বিন মু’য়ায রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ইসলাম গ্রহণ করলে সেই গোত্রের সকল লোক মুসলমান হয়ে যান।


আরো পড়ুন এই লিংকে
ইতিহাসে লিখিত প্রথম সংবিধান – মদিনা সনদ ।

2 comments:

  1. ক. অমুসলিমদের মাঝে দাওয়াতের হুকুম কি
    খ. বায়াতে আকাবা নবুয়তের কোন বছর হয়
    গ. শি বে আবু তালিবের সংকট কতদিন চলে
    ঘ. রাসুল (সাঃ) কত গুলো চিঠির মাধ্যমে অমুসলিমদের ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলেন

    দয়া করি যদি সঠিক উত্তর গুলা বলে দিতেন রিপ্লেতে

    ReplyDelete
    Replies
    1. ক. ফরজে কেফায়া।
      খ.
      গ. ৩ বছর।
      ঘ.

      Delete