কোন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার পিতা-মাতা, এবং তার সন্তান ও সমস্ত মানুষ থেকে আমাকে বেশি মোহাব্বত করবে। {সহীহ বুখারী শরিফ, হাদীস নং-১৫, সহীহ মুসলিম শরিফ, হাদীস নং-১৭৭}

Thursday, April 4, 2019

ইতিহাসে লিখিত প্রথম সংবিধান – মদিনা সনদ ।


ইতিহাসে লিখিত প্রথম সংবিধান মদিনা সনদ  কি এবং কেন?

মদিনা সনদ


 মানব সভ্যতার ইতিহাসে ইসলাম অতীব মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে আসীন।হযরত আদম আলাই সাল্লাম এর অবতরণের পর হতে মানব সমাজ সভ্যতা সংস্কৃতির বিকাশের অসংখ্য স্তর  পাড়ি দিয়েছে ।এ অগ্রযাত্রায় যে গতি ইসলামের  মাধ্যমে সঞ্চারিত হয়েছে তা হলো কোন ধর্ম জ্ঞান বিজ্ঞান মতবাদ বা সংস্কার মূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে সাধিত হয়নি ।ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম। যা মানুষের স্বভাব বা প্রকৃতির সাথে দারুন সামঞ্জস্যপূর্ণ এর তাৎপর্য হচ্ছে মানব গোষ্ঠীর অস্তিত্ব ও সুষ্ঠু অগ্রযাত্রায় ইসলামের মৌলিক নিয়ম নীতি অনুসরণের মধ্য নিহিত এবং এর মূলনীতি থেকে বিচ্যুতি আত্মহত্যার শামিল। মানবতার ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, দেশ বা জাতির প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য ইসলামের সত্যতা স্বীকার করে আইন কানুন এর প্রতি যত্নবান হয়েছে এবং অন্যত্র সামগ্রিক বিকাশ তাদের ভাগ্য নীতিতে পরিণত হয়েছে ।হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর  উত্তম আদর্শ এমন একটি মাপকাঠি যা ইসলামের মূলনীতির  বাস্তব বিশ্লেষণ। নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনের প্রতিটি ‍দিক মানব সমাজকে সত্যের দিশা দেয় ।

হুজুর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামী আন্দোলনকে সার্থক করে তুলতে যে পদ্ধতি অবলম্বন করেন তাতে দাওয়াতি, সমর জিহাদ, আইনি ও সাংবিধানিক, রাজনৈতিক ও সন্ধি ভিত্তিক প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত। আর এস পদক্ষেপ গ্রহণ এবং এর পিছনে তার সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অক্লান্ত পরিশ্রমের মূল উদ্দেশ্য ছিল সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা, মিথ্যা বিলুপ্ত করা এবং ইসলামের হক তথা সত্যধর্মকে বিজয় দান করা।  মদিনা সনদ হল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাজনৈতিক সন্ধি বিষয়ক এবং আইনি ও শাসনতান্ত্রিক প্রচেষ্টার এক অসাধারণ  প্রতিফলন।

মদিনার সনদ একদিকে যেমন   রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাওয়াত ও তাবলীগের ক্ষেত্রে নয়া দিগন্তের সূচনা করেছে, অন্যদিকে এ সনদ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ইসলামকে সর্বকালের জন্য এক অনন্য ও অতুলনীয় মর্যাদা দিয়েছে। মদিনার সনদ পৃথিবীর প্রথম লিখিত সংবিধান হওয়ার মর্যাদায় ভূষিত। আরবের মরুভুমিতে এক নিরক্ষর (উপমা দিতে গিয়ে বোঝানো হয়েছে)নবী এমন সময় পৃথিবীতে একটি পূর্ণাঙ্গ লিখিত সংবিধান উপহার দেয় যখন পৃথিবীতে কোন আইন বা সংবিধানের অস্তিত্ব ছিল না। আধুনিক ইউরোপের আইন ও সাংবিধানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল 1215 সনে, যখন ব্রিটিশ রাজা জন ম্যাগনাকার্টা স্বাক্ষর করেছিল। অথচ এর আরও 593 বছর পূর্বে 622 খ্রিস্টাব্দে মদিনা রাষ্ট্রের হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে একটি  পূর্ণাঙ্গ লিখিত সংবিধান দেয়া হয়েছিল।

 ব্রিটেন থেকে প্রকাশিত লাইব্রেরী অফ মর্ডান নোলেজে বিশ্ব রাজনীতি ও আইনি সংস্থা এবং এর অগ্রগতি কথা বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেন
The world first unified state of which we know was established in Egypt around 3200 BC……………………………. when the two Kingdoms of upper and lower Egypt were United. A Centralised and bureaucratic Empire eventually developed. Others Empire followed, notably those of Persia, China and Rome of all which covered vast areas of the world. But the state as it exists today is based on model that evolved in western Europe after the fall of the Roman empire in the 5th century A.D
                                           

আমাদের জানামতে বিশ্বে প্রথম সংঘটিত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয় খ্রিস্টপূর্ব  3200সনে মিশরে;  যখন মিশরের উভয় রাজ্য সংযুক্ত ও একীভূত হয়। এভাবে একটি কেন্দ্রীয় এবং নিয়মতান্ত্রিক সাম্রাজ্য অস্তিত্বে আসে। পরবর্তীতে যে সকল রাজত্বের উদ্ভব হয়, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইরান চীন এবং রোম সাম্রাজ্য। যা পৃথিবীর ব্যাপক  অংশে বিস্তৃত ছিল। কিন্তু বর্তমান বিশ্বের রাষ্ট্র ব্যবস্থা তার ভিত্তি প্রস্তর সেই  মানদন্ডের উপর প্রতিষ্ঠিত।যা  খ্রিস্টাব্দের পঞ্চম শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর ইউরোপে বিস্তার লাভ করে।

The next stage in the evolution of the state as we know it today was the development of the territorial state as a defined area of land with a single Meler…… By the end of the 17th century, this form of state was common all over the Europe.
p (reader biggest library of modern knowledge. volume 2 Ed.1979)
রাষ্ট্র ব্যবস্থার ক্রমবিকাশ এর পরবর্তী ধাপ ছিল অঞ্চলভিত্তিক রাজ্যের উত্থান যেটা সঙ্গে আজ আমরা পরিচিত। অর্থাৎ রাজ্য একটা নির্দিষ্ট এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হবে এবং এর একজন শাসক থাকবে। এই আদলের রাষ্ট্র ব্যবস্থা সতেরো শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত সমগ্র ইউরোপের অধিষ্ঠিত ছিল।
অর্থাৎ বিশ্বের রাজনৈতিক ও আইনি বিবর্তন বা ক্রমবিকাশের পুরো যাত্রায় ইসলামের কোন ভূমিকা পশ্চিমা দুনিয়ার লেখকদের নজরে পড়েনি। অথচ ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে পশ্চিমা বিশ্ব তাদের রাজনীতি ও আইনের বর্তমান পর্যায়ে পৌঁছাতে শত শত বছরের রাস্তা পাড়ি দিতে হয়েছে।

 ব্রিটেনে 1215 সনে ম্যাগনাকার্টা- 16 ই ডিসেম্বর 16 89 সনে Bill of rights,  1700 সনে The of sattlementএবং 1911 সনে The parliament act চূড়ান্ত করা হয়। আমেরিকায় 1787 সনে constitutional convention অনুষ্ঠিত হয় এবং ফ্রান্সের 1791 সনে জাতীয় সংসদ আইন মঞ্জুর করে।

 যদিও মানবাধিকার বা মানুষের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের সাংবিধানিক যাত্রা পশ্চিমা বিশ্ব 1215 সনে শুরু করলেও এরপর সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে আরো শত শত বছর অতিবাহিত হয়ে যায়। এর প্রমাণ হচ্ছে রাজ্য পরিচালনায় শাসকের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের নানা অভিযোগ দূরীকরণের লক্ষ্যে অভিযোগগুলোর সত্যতা যাচাই বাছাই করে সরকারকে এর রিপোর্ট দেয়ার জন্য সর্বপ্রথম 1809 সনে এক ব্যক্তিকে সুইডেনের নিয়োগ দেওয়া হয়। জাদ দীর্ঘ সময় ধরে আনুষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতি ছিল। অনেক বছর ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোকে পদ্ধতি গ্রহণ করে। অথচ হিজরী এক সনে মদিনার সনদের মাধ্যমে যে ইসলামের যাত্রা শুরু,সেটি 10 বছরের কম সময়ের মধ্যে আইন ও রাজনৈতিক অঙ্গনে সফলতা ও উৎকর্ষতার চরম পর্যায়ে আরোহন করে।

 হিজরী সনে যখন হুজুর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন, সর্বকালের মানবজাতির জন্য এক অনন্য ও আধুনিক দিক নির্দেশনা পূর্ণ ছিল। অতঃপর খোলাফায়ে রাশেদীনের সময়কাল এবং এর ধারাবাহিকতা এবং প্রতিক্রিয়া আরো বেগবান হয়েছিল। রাষ্ট্রের একজন সাধারন এতটুকু অধিকার ছিল যে, সে কোন ব্যাপারে খলিফার কাজের মূল্যায়ন করতে পারত। এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারত।

 আজ উন্নত বিশ্বের সংবিধান সমূহের মধ্যে সাত হাজার শব্দ ভান্ডার দ্বারা রচিত আমেরিকার সংবিধান কে একটি সংক্ষিপ্ত ও আদর্শ সংবিধান হিসেবে বিবেচনা করা হয় ।অথচ চৌদ্দশ বছর পূর্বে হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক প্রদত্ত 730 শব্দের মদিনার সনদ এর চেয়ে অনেক বেশি সুসংহত, যাতে সকল শ্রেণীর লোকের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। সরকারের দায়িত্ব পালনের পদ্ধতি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সংখ্যালঘুসহ সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে এবং একটি সফল ইসলামী রাষ্ট্রের প্রকৃত রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে ।

মদিনার সনদ সম্পর্কিত এ রচনাটি অধ্যাপক ডঃ মুহাম্মদ তাহের উল কাদেরী রচিত বই "মদিনার সনদ" থেকে নেয়া হয়েছে।



আরো জানতে ক্লিক করুন এই লিংকে

মদিনা সনদ প্রতিষ্ঠায় প্রথম বায়াতের ঘটনা ।

0 comments:

Post a Comment