কোন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার পিতা-মাতা, এবং তার সন্তান ও সমস্ত মানুষ থেকে আমাকে বেশি মোহাব্বত করবে। {সহীহ বুখারী শরিফ, হাদীস নং-১৫, সহীহ মুসলিম শরিফ, হাদীস নং-১৭৭}

Monday, April 1, 2019

ইয়ামানের বাদশার রাজকীয় ভ্রমণকাহিনী ।



 কিতাবুল মুসততরফ হুজ্জাতুল্লাহ আলাল আলামিন ও তারিখে ইবনে আসাকির এ বর্ণিত আছে যে, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পৃথিবীতে আবির্ভাব এর এক হাজার বছর পূর্বে ইয়ামানের বাদশা ছিলেন তুব্বে আউয়াল হোমাইরি । 



তিনি একবার স্বীয় রাজ্য পরিভ্রমণে বের হয়েছিলেন ।তার সাথে ছিল বার হাজার আলেম ও হেকিম, এক লক্ষ বত্রিশহাজার অশ্বারোহী এবং এক লক্ষ তের হাজার পদাতিক সিপাই ।  এমন শান শওকতে বের হয়েছিলেন যে, যে যেখানেই গেছেন, এ দৃশ্য দেখার জন্য চারিদিক থেকে লোক এসে জমায়েত হয়ে যেত। ভ্রমণ করতে করতে যখন মক্কা নগরীতে পৌঁছলেন, তখন তার এ বিশাল বাহিনী কে দেখার জন্য মক্কা বাসীর কেউ আসলেন না । বাদশা আশ্চর্য হয়ে গেলেন এবং উজিরে আজম কে এর কারণ জিজ্ঞাস করলেন ।উজির ওনাকে জানালেন এ শহরে এমন একটি ঘর আছে যাকে বাইতুল্লাহ বলা হয় । এ ঘর ও এ ঘরের খাদেমগণ এবং এখানকার বাসিন্দাগণকে পৃথিবীর সমস্ত লোক সীমাহীন মর্যাদা করে । আপনার বাহিনী থেকে অনেক বেশি লোক নিকটবর্তী ও দূর-দূরান্ত থেকে এ ঘর জিয়ারত করতে আসে এবং এখানকার বাসিন্দাদের সাধ্যমত খেদমত করে চলে যায় ।তাই আপনার বাহিনীর প্রতি উনাদের কোন আকর্ষন নেই এটা শুনে বাদশা রাগ আসলো এবং কসম করে বললেন আমি এই ঘরকে ধূলিসাৎ করব এবং এখানকার বাসিন্দাগণকে হত্যা করব এটা বলার সাথে সাথে বাদশার নাক মুখ ও চোখ থেকে রক্ত ঝরতে লাগল এবং এমন দুর্গন্ধময় পুঁজ বের হতে লাগল যে ওর পাশে বসার কারো সাধ্য রইল না । এ রোগের নানা চিকিৎসা করা হলো কিন্তু কোন কাজ হলোনা । বাদশা সফরসঙ্গী ওলামা একরামের একজন আলেমে রব্বানী নাড়ী দেখে বললেন রোগ হচ্ছে আসমানী কিন্তু চিকিৎসা হচ্ছে দুনিয়াবী হে বাদশা মহোদয়, আপনি যদি কোন খারাপ নিয়ত করে থাকেন, তাহলে অনতিবিলম্বে সেটা থেকে তওবা করুন।বাদশা মনে মনে বায়তুল্লাহ শরীফ ও এর খাদেমগন সম্পর্কিত যে ধারণা করেছিলেন তা থেকে তওবা করলেন এবং সাথে সাথে রক্ত ঝরা ও পুঁজ পড়া বন্ধ হয়ে গেল ।আর সেই খুশিতে বাদশা বায়তুল্লাহ শরীফে গিলাফ চড়ানো এবং শহরের প্রত্যেক বাসিন্দাকে সাতটি করে সোনার মুদ্রা ও সাত জোড়া রেশমি কাপড় নজরানা দিলেন।অতঃপর এখান থেকে মদিনা-মনোয়ারা গেলেন এবং সফরসঙ্গী ওলামায়ে কেরামের মধ্যে যারা আসমানী কিতাব সমূহ সম্পর্কে বিজ্ঞ ছিলেন তারা সেখানকার মাটি শুকে ও পাথর পরীক্ষা করে দেখলেন যে, শেষ নবীর হিজরতের যে স্থানের যেসব আলামত তারা পড়েছিলেন এ জায়গার সাথে এর মিল দেখলেন।তখন তারা সংকল্প করলেন আমরা এখানে মৃত্যুবরণ করবো এবং এ জায়গা ত্যাগ করে কোথাও যাবো না আমাদের কিসমত যদি ভাল হয় তাহলে কোন এক সময় শেষ নবীর তাশরীফ আনলে আমরাও সাক্ষাৎ করার সৌভাগ্য লাভ করব অন্যথায় কোন এক সময় তাঁর পবিত্র জুতার ধূলি উরে এসে আমাদের কবরের উপর নিশ্চয়ই পতিত হবে যা আমাদের নাজাতের জন্য যথেষ্ট।এটা শুনে বাদশা ওসব আলেমদের জন্য চারশত ঘর তৈরি করালেন এবং সেই বড় আলেমে রব্বানীর ঘরের কাছে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উদ্দেশ্যে দোতলা বিশিষ্ট একটি উন্নত ঘর তৈরি করালেন এবং বলেন যে যখন তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশরীফ আনবেন তখন এই ঘরখানা যেন তাঁর আরামগা হয় । ওই চারশত আলেমগণ কে যথেষ্ট আর্থিক সাহায্য করলেন এবং বললেন আপনারা এখানে  স্থায়ী ভাবে  থাকুন ।অতঃপর সেই বড় আলেমের রব্বানীকে একটি চিঠি দিলেন এবং বললেন আমার এই চিঠি শেষ নবীর খেদমতে পেশ করবেন।যদি আপনার জিন্দেগীতে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আবির্ভাব না ঘটে তাহলে আপনার বংশধরকে ওসিয়ত করে যাবেন যেন আমার এ চিঠিখানা বংশানুক্রমে হেফাজত করা হয় যাতে শেষ পর্যন্ত শেষ নবীর খেদমতে পেশ করা হয় এরপর বাদশা দেশে ফিরে গেলেন ।

 এই চিঠি এক হাজার বছর পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে পেশ করা হয়েছিল। কিভাবে পেশ করা হয়েছিল এবং চিঠিতে কি লেখা ছিল তা শুনুন এবং হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শান মান এর বাস্তব নিদর্শন অবলোকন করুন।
অধম বান্দা তুব্বে আউয়াল হোমাইরা এর পক্ষ থেকে শফিউল মুজনাবিন সাইয়েদুল মুরসালিন মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি - হে আল্লাহর হাবিব, আমি আপনার উপর ঈমান আনতেছি এবং আপনার প্রতি যে কিতাব নাজিল হবে সেটার উপর ঈমান আনতেছি আর আমি আপনার ধর্মের উপর আস্থাশীল।অতএব যদি আমার আপনার সাথে সাক্ষাতের সুযোগ হয় তাহলে খুবই ভালো ও সৌভাগ্যের বিষয় হবে।আর যদি আপনার সাক্ষাৎ নসিব না হয় তাহলে আমার জন্য মেহেরবানী করে শাফায়াত করবেন এবং কিয়ামত দিবসে আমাকে নিরাশ করবেন না।আমি আপনার প্রথম উম্মত এবং আপনার আবির্ভাবের আগে আপনার বায়াত করছি।আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ এক এবং আপনি তার সত্যিকার রসূল (দরূদ)।

 ইয়ামানের বাদশার এ চিঠি বংশানুক্রমে ৪০০শত ওলামা একরাম এর পরিবারের মধ্য প্রাণের চেয়েও অধিক যত্নসহকারে রক্ষিত হয়ে আসছিল ।এভাবে এক হাজার বছর অতিবাহিত হয়ে গেল ওসব ওলামায়ে কিরামের সন্তান-সন্ততির সংখ্যা বেড়ে মদিনার অধিবাসী কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেল।এই চিঠি ও ওসিয়ত নামা ও সে বড় আলেমের রব্বানীর বংশধর এর মধ্য হাত বদল হতে হতে হযরত আবু আইউব আনসারী রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু এর হাতে এসে পৌঁছে।তিনি এটা তার বিশিষ্ট গোলাম আবু লায়লার হেফাজতে রাখেন । যখন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনা মনোয়ারার প্রান্তসীমায় পদার্পণ করেন, সুন্নিয়াতের ঘাটি সমূহ থেকে যখন তাঁর উষ্ট্রের দৃষ্টিগোচর তখন মদিনার সৌভাগ্যবান লোকেরা মাহবুবে খোদার অভ্যর্থনার জন্য নারায়ে রেসালতের স্লোগান দিয়ে দলে দলে এগিয়ে গেলেন, অনেকে ঘর বাড়ি সাজানো ও রাস্তাঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজে নিয়োজিত হলেন, অনেকে দাওয়াতের আয়োজন করতে লাগলেন।সবাই এটাই অনুনয়-বিনয় করেছিলেন যে, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে তাশরীফ রাখুক।হুযুর সাল্লাল্লাহু হে ওয়াসাল্লাম ফরমালেন যে, আমার উষ্ট্রের লাগাম ছেড়ে দাও এবং এটা যে ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে এবং বসে যাবে সেটাই হবে আমার অবস্থানের জায়গা।উল্লেখ্য যে, ইরানের বাদশা তুব্বে আউয়াল হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য যে দুতলা বিশিষ্ট ঘর তৈরি করেছিলেন সেটা তখন হযরত আবু আইয়ুব আনসারীর অধীনে ছিল।আর উটটিও সে ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। লোকেরা আবু লায়লাকে গিয়ে বললেন ইয়ামানের সেই বাদশার সেই চিঠি খানা হুজুরকে দিয়ে এসো ।অতঃপর সে যখন হুজুরের সামনে এসে হাজির হলো হুজুর (দরূদ) ওনাকে দেখে ফরমালেন, তুমি আবু লায়লা । এটা শুনে আবু লায়লা আশ্চর্য হয়ে গেল। পুনরায় ফরমালেন যে, আমি মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ(দরূদ),  ইয়ামানের বাদশাহর সেই চিঠিটা যেটা তোমার হেফাজতে আছে সেটা আমাকে দাও।অতঃপর আবু লায়লা সেই চিঠিটা হুজুরকে দিলেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চিঠি পাঠ করে ফরমালেন, বাদশা তুব্বা আউয়াল কে অশেষ মোবারকবাদ ।

2 comments:

  1. মাশ আললাহ আলহামদুলিল্লাহ

    ReplyDelete
  2. এই বিষয়ে কোন হাদিস আছে কি , কেউ জানলে দয়া করে জানাবেন।

    ReplyDelete