কোন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার পিতা-মাতা, এবং তার সন্তান ও সমস্ত মানুষ থেকে আমাকে বেশি মোহাব্বত করবে। {সহীহ বুখারী শরিফ, হাদীস নং-১৫, সহীহ মুসলিম শরিফ, হাদীস নং-১৭৭}

Thursday, March 28, 2019

অন্যতম আউলিয়া শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তার (রহঃ) এর জীবনী ।


হযরত শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তার রহমাতুল্লাহ আলাইহে এর জীবনী 

শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তার রহমাতুল্লাহ আলাইহে এর জীবনী

হযরত শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তার এর প্রকৃত নাম মোহাম্মদ ইবনে আবু বক্কর ইব্রাহিম   ডাক নাম ফরিদ উদ্দিন আত্মার ছদ্মনামে কবিতা লিখতেন তিনি আতরের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করে হাত তার নামেই তিনি সারা বিশ্বের সুপরিচিত

 মধ্য এশিয়ার  নিশাপুর শহরে তার জন্ম  এবং আর পবিত্র মাজার সেখানে অবস্থিত   তার জন্ম তারিখ সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে তবে অনেকের মতে 513 হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন তাঁর সুদীর্ঘ জীবন এবং তার মৃত্যুর কারণ সম্বন্ধে ঐতিহাসিকগণ বলেন,  3 তারিখ  দস্যুদের হাতে শাহাদাত বরণ করেন

শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তার রহমাতুল্লাহ আলাইহে


তিনি প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করার পর এক  বড় ঔষোধালয় এর মালিক হন একদিন তিনি দোকানে বেচা কেনায় ব্যস্ত ছিলেন  এমন এক সময়   ফকির এসে বলল আল্লাহর নামে কিছু দান করুন ফকির কেমন ভাবে চিৎকার করলো এবং  হযরত শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তার রহমতুল্লাহি তার নিজ কাজে এতই মশগুল ছিলেন যে, ভিখারিকে কিছু দেয়া দূরে থাক তিনে উত্তর দেয়ার সময় টুকু পেলেন না ফকিন্নিরা সে বলল আহা নগণ্য দুনিয়া সামান্য ধন দিতে কুন্ঠিত, না জানি তুমি প্রাণ দিতে কত কুণ্ঠিত হবে এসব ভাবতে শুনে আত্মার রেগে গিয়ে বললেন,  তুমি যেভাবে দিবে আমি সেভাবেই  দিব ভিক্ষুক সাথে সাথেই বললো, বেশ আমার মতই দান করবে?  কথা বলতে বলতে সে  ভিক্ষার ঝুলিটি মাথার নিচে রেখে মাটির উপরেই শুয়ে পড়ে  মুখে কালেমা তৈয়বা পড়ে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ  উচ্চারণ করতে লাগলো দেখতে দেখতে সে অবস্থায় তার প্রাণ বের হয়ে গেল    ঘটনাটি আক্তারের মনে এতই প্রভাব বিস্তার করে যে,  তিনি  ভিক্ষুকের    কাফন দাফন সমাধা করে  নিজের বিরাট ঔষধালয় এবং কারখানার দান করে ভিক্ষুকের বেশ ধারণ করে রুকনুদ্দিন  আফাকের কাছে গিয়ে  তার খেদমতে থেকে মারেফতের জ্ঞান লাভের জন্য কয়েকবছর তরিকত শিক্ষায়  মশগুল হন তারপর তিনি হজের উদ্দেশ্যে গমন করেন এবং সেখানে অনেক মাশায়েখের সহবতে থেকে তরিকত শিক্ষায় মশগুল হন সর্বশেষ  মাজদুদ্দিন   বাগদাদীর হাতে বায়াত হন মারিফতের বহু উচ্চ স্তরে উন্নীত হলে স্বীয়  মোরশেদ গৌরব কারণ জগতের অন্যতম তাত্ত্বিক হিসেবে প্রসিদ্ধ লাভ করেন

হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি এর শাহাদাতের বর্ণনায় পাওয়া যায়,  তাতাড়ি দস্যুদের নিশাপুর লুণ্ঠনকালে   এক দস্যু শেখ সাহেব কে হত্যা করার জন্য আক্রমণ করে   তখন এক ব্যক্তি বলল মহামান্য আল্লাহর ওলী কে হত্যা করোনা পরিবর্তে তোমাদের সহস্ত্র আশ্রাফী বা মোহর আমি দেব শেখ সাহেব বলেন, এত স্বপ্ন মূল্যে আমাকে বিক্রি করো না আমার মূল্য আরো অনেক বেশি অধিক মূল্য পাবার আশায় তাতার দস্যু  শেখ সাহেব কে নিয়ে আরো কিছুদূর অগ্রসর হলেন এবং  আরো ব্যক্তি বলে পীর  সাহেবকে হত্যা না করে আমার হাতে ছেড়ে দাও বিনিময় তোমাকে একটি খরের বোঝা প্রদান করব এবারও শেখ সাহেব বলেন, হা দিয়ে দাও,আমার মূল্য এটা অপেক্ষাও কম দস্যু মনে করলো শেখ সাহেব ঠাট্টা করছে রাগ সামলাতে না পেরে সেই দস্যু হযরত শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তার সাহেবকে হত্যা করে ফেলল

হযরত মাওলানা জালালউদ্দিন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি বহুত জায়গায় শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্মার রহমাতুল্লাহ আলাইহে কে নিজের পথ প্রদর্শক ইমাম রূপে গ্রহণ করেছেন তার শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে বারবার নিজের রচিত   বহু বিশ্ব বিখ্যাত গ্রন্থ মসনবী শরীফে শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তার রহমাতুল্লাহ আলাইহির  প্রতি অসংখ্য তাজিম   সম্মান প্রদর্শন করেন এবং অনেক  সুখ্যাতি বর্ণনা করেছেন এমনকি তার বিখ্যাত গ্রন্থ শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তার কে নিয়ে একটি কবিতা সংযোজন করেছেন 

হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি এর উদ্ধৃতি টেনে হযরত মাওলানা শেখ নিজামী রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন ,একশত পঞ্চাশ বছর পর আল্লাহ পাক  শেখ  আত্তারী রহমতুল্লাহ আলাইহে এর উপর নূরের জ্যোতি নাজিল করেছেন বিশ্ব বিখ্যাত পারস্য কবি জামি রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন,  সেখ আত্তার এর কবিতায়  যেমন তৌহিদের  মহাত্ম্য  এবং মারিফতের গুপ্ত রহস্য পাওয়া যায়,তেমন আর কোনো সূফীর কবিতায় দৃষ্টিগোচর হয় না কারো কারো মতে  তার রচিত পদ্য গদ্যর গ্রন্থ সংখ্যা কুরআন শরীফের  সূরার  সম সংখ্যক বর্তমানে  তার রচিত মোট  114 থানা বই রয়েছে কাজী নুরুল্লাহ শোছতারী রহমাতুল্লাহ আলাইহেমাজালেসূল মুমিনীননামক গ্রন্থেও অনুরূপ অভিমত ব্যক্ত করেন যা হোক তা রচিত গ্রন্থ গুলোর মধ্যে বর্তমানে
.তাজকেরাতুল আউলিয়া
. মান কুত তায়র
.মুসিবত নামা
. আসরারনামা
. তাইসিরনামা
. এলাহি নামা
. দীওয়ান  নামা
.পান্দেনামা
. ওসিয়ত নামা
১০.খসরুগোল নামা
১১. শরহুল কলব ইত্যাদি বিখ্যাত

 শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তার রহমাতুল্লাহ আলাইহে নিজেকে সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র নিকৃষ্টতম মানুষ বলে মনে করতেন সম্ভবত এজন্যই তার নাম আর সারা পৃথিবীতে আরেক আল্লাহ প্রেমিক গণের মধ্যে অমর হয়ে আছে হযরত আক্তার এর একটি বৈশিষ্ট্য হলো যে, মাওলানা রুমির বিখ্যাত দর্শনশাস্ত্র মসনবী যার প্রধান উৎস হলেন তিনি নিজেই

হযরত  ফরিদ উদ্দিন আত্তার রহমাতুল্লাহ আলাইহের  রচিত গ্রন্থের বিষয়সূচি প্রকাশভঙ্গি অভিনব আল্লাহ এবং রাসূলের প্রশংসাবাদ খোলাফায়ে রাশেদীনের  সুখ্যাতি বর্ণনার পর  গল্পের মূল বক্তব্য এভাবে শুরু করেছেন প্রথমত:  গল্পে বর্ণিত ব্যক্তিগণকে পাখি কল্পনা করা হয়েছে যথা- হুদহুদ,তোতা,মোরগ,কবুতর, বুলবুল বাজ ইত্যাদি   একদিন এক সভায় একত্রিত হয়ে পাখিগুলো তাদের মধ্য থেকে একজন  বাদশাহ নির্বাচন করতে চাইল হুদহুদ এই পদের জন্য মোরগের নাম প্রস্তাব করে অন্যান্য পাখি এতে আপত্তি উত্থাপন করল হুদহুদ  একে একে প্রত্যেকের আপত্তি শুনতে লাগলো এবং একে এক এক করে প্রত্যেকটির উত্তর প্রদান করতে লাগলো অবশেষে সবাই এক বাক্যে সুসংবাদদাতা হুদহুদের প্রস্তাব সমর্থন করে মোরগকে সম্রাট স্বীকার করতে রাজি হল তারপর তার কার্য প্রণালী সম্পর্কে যা সাধারণত সালেকের  অর্থাৎ আল্লাহর পথের পথিকের মনে হয়, প্রশ্নোত্তর আকারে তা সন্নিবেশন করেন মানকেতুক তায়ের নামটি পবিত্র কোরআন শরীফের সূরা নামাল হতে গৃহীত হুদহুদ পাখি জ্ঞান বুদ্ধি তে শ্রেষ্ঠ ছিল বলে হযরত সুলাইমান আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খুব প্রিয় ছিল শেখ ফরিদউদ্দিনও তরিকতের গুঢ় তথ্যসমূহ হুদহুদ রূপ সালেক এর মুখ দিয়ে বর্ণনা করেছেন তিনি প্রথমে আল্লাহ পাকের প্রশংসা বর্ণনা পূর্ব নিজের অক্ষমতা দুর্বলতা নিষ্ক্রিয় তার উপর বিশেষ জোর দিয়ে আল্লাহতালার যে অসীম শক্তি সৃষ্টি দর্শনের সাধারণ মানব এমনকি নবীগণ পর্যন্ত স্তম্ভিত অভিভূত হয়েছিলেন তা সুললিত ফারসি ভাষায় প্রকাশ করেন হযরত ইয়াকুব নবী নিজ পুত্র হযরত ইউসুফ কে হারিয়ে যে সুদীর্ঘ 40 বছর কান্নাকাটি করেছিলেন তারপর সে বিষয়ে বর্ণনা করেন হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন নগণ্য গোলাম রূপে মিশরে বিক্রি হয়ে বিনা অপরাধে জেল অবস্থানের পর কিভাবে আবার আল্লাহ পাকের অসীম রহমতে নবুওয়াত বাদশাহী লাভ করেন এরপর তা বর্ণনা করেন

 হযরত আইয়ুব আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদীর্ঘ 18 বছর  নানা  কীটের খোরাক হয়ে অসীম যন্ত্রণার মধ্য ধৈর্য ধারণ করেছিলেন তারপর সে সম্পর্কে বর্ণনা প্রদান করেন অবশেষে  সরোয়ার কায়েনাতের পবিত্র জীবনের নানা রোগ মোজেজা বা অলৌকিক ঘটনা সমূহ বর্ণনা করে প্রমাণ করেন যে,স্বীয় অস্তিত্ব   আমিত্বের  বিলুপ্ত ব্যতীত  আল্লাহ তাআলার  অর্জন এর পক্ষে অসম্ভব তারাই হচ্ছেন তার প্রিয় পাত্র

 মনে হয় মুখে আপন প্রভুর কাছে অক্ষমতা, দুর্বলতা অজ্ঞতা প্রকাশ করে আল্লাহ ভীতি অপেক্ষা নিজের নফসকে অধিক ভয় করা প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য আর রাহমানুর রাহিম অত্যন্ত বিনয় নম্রতা সহ আবেদন করতে করতে মোনাজাত করতে হবে যে, হে আল্লাহ, এই অধম উপর ইসলামের জাহেরী গণ্ডির মধ্যে পড়ে আছে তোমার পবিত্র প্রেমের একটি কণা তাকে প্রদান কর

 হযরত ফরিদ উদ্দিন আত্তার রহমতুল্লা আলাইহি কবিতা ছাড়া গদ্য লেখাও পরিপক্ক ছিলেন

0 comments:

Post a Comment