কোন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার পিতা-মাতা, এবং তার সন্তান ও সমস্ত মানুষ থেকে আমাকে বেশি মোহাব্বত করবে। {সহীহ বুখারী শরিফ, হাদীস নং-১৫, সহীহ মুসলিম শরিফ, হাদীস নং-১৭৭}

Wednesday, December 21, 2016

Islamic Short biography of Allama Jalaluddin Suyuti (RH.) in Bangla |

আল্লামা জালালুদ্দিন সূযূতি ( রহ.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

জালালুদ্দিন সয়ুতী নামে পরিচিত আর প্রখ্যাত তাফসীর গ্রন্থের লেখক প্রখ্যাত এই ব্যাক্তির আসল নাম হল আব্দুর রহমান । জালালূদ্দিন হল ইনার উপাধি । উপনাম আবুল ফজল । পিতার নাম আবু বকর
মুহাম্মদ কামালুদ্দিন সুয়ূতি । সুয়ূতি হল একটি শহরের নাম ।যেটা মিশরের নীল নদের পূর্ব দিকে
অবস্থিত ।এখানে ৮৪৯ হিজরীতে ১লা রজব তিনি জন্মগ্রহন করেন ।

Islamic Bangla site


৮৫৫ হিজরীতে মাত্র ৫ বছর বয়সে ইনার পিতা মারা যান । পিতার ইন্তেকালের পর উনার বাবার সাথীগণ উনার পড়ালেখার দায়িত্বভার গ্রহন করেন । বিশেষভাবে শায়খ কামালূদ্দিন ইবনুল হুমাম হানাফী তাকে বিশেষভাবে দেখাশুনা করেন । আট বছর বয়সে পবিত্র কোরআন হিফজ শেষ করেন । তার বালাগাত, ফিকাহ, ফারায়েজ, হাদীস, তাফসীর, তাসাউফ, আকাঈদ, চিকিৎসাশাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান নেন । তিনি বলেন “আমি হজের সময় এ নিয়তে জমজম কূপর পানি পান করেছি যে, ফিকাহ শাস্ত্রে শায়খ সিরাজউদ্দিন বালকীনী আর হাদিস শাস্ত্রে হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানীর পর‌্যায়ে পৌছাতে পারি । তিনি আরো বলেন আল্লাহ তায়ালা আমাকে সাতটি শাস্ত্রে তথা হাদিস, তাফসীর, ফিকাহ, নাহু, মা’আনী, বয়ান, এবং শাস্ত্রে বুৎপত্তি দান করেছেন ।

তিনি এত প্রখর মেধাশক্তির অধিকারী ছিলেন যে ইলমে হাদিসের জগতে উনার সমকক্ষ তখনকার জমানায় কেউ ছিল না । তিনি নিজেই বলেন আমার ২লাখ হাদীস মুখস্থ আছে, যদি এর চেয়েও বেশী হাদীছ আমি পেতাম তবে তাও মুখস্থ করতাম । সম্ভবত তখন এর চেয়ে হাদীস ছিল না ।
ইলম শেখার জন্য তিনি বহু দেশ সফর করেছেন । বহু উস্তাদ এর সংস্পর্শ পেয়েছেন । জানা যায় তিনি প্রায় ৫০০ উস্তাদ ও শায়খের কাছ থেকে জ্ঞান নিয়েছেন ।

আল্লামা সূয়ূতি রহ. ছাত্রজীবন শেষ করার পর হিজরী ৮৭০ সনে ফতওয়া দেয়ার কাজ শুরু করেন । ৮৭২ সনে  ফতওয়া লেখার কাজ শুরু করেন । তিনি প্রয় ৫০০শথ গ্রন্থ রচনা করেছেন । ৪০ বছর বয়সে তিনি বিচার কাজ ও ফতওয়ার কাজ থেকে অব্যাহতি নিয়ে নির্জনতা অবলম্বন গ্রহন করেন । রিয়াজত, মুজাহাদা, ইবাদত, ও হেদায়াতের কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন । পরহেগারিতার ব্যাপারে তিনি এমন পথ অবলম্বন করেন যে, বিভিন্ন সময় আমীর এবং ধনাঢ্য ব্যাক্তির কাছ থেকে কোন হাদিয়া বা উপঢৌকোন আসলে তিনি তা নিতেন না । একবার সুলতান ঘোরী উনার জন্য উপঢৌকন হিসেবে একহাজার স্বর্ণমুদ্রা ও একজন গোলাম পাঠালে তিনি গোলামকে আযাদ করে রাসূলে করিম ( দরূদ ) এর হূজরা মোবারকের খাদিম হিসেবে পাঠিয়ে দেন আর স্বর্ণমুদ্রা ফেরত পাঠান ।

তিনি একজন বড় মাপের কবিও ছিলেন । অসংখ্য কবিতা লিখেছেন । বড়মাপের ওলিও ছিলেন । এ ব্যাপারে তার একটা কারামত প্রসিদ্ধ যে, তার বিশেষ খাদেম মুহাম্মদ ইবনে আলী হাব্বাক বর্ণনা করেন যে, একদিন দুপুরে খাবারের পর তিনি বললেন যে, তুমি যদি আমার মৃত্যু অব্দি এ কথা কাউকে না বলো তবে আমি তোমাকে আজ আসরের নামাজ মক্কা শরীফে পড়ার ব্যবস্থা করে দেব । খাদেম রাজী হলেন । সূয়ূতী রহ. তাকে চোখ বন্ধ করতে বললেন এবং ২৭ কদম যাবার পর চোখ খুলতে বললেন । চোখ খুলে দেখলেন উনারা মক্কায় বাবে মুয়াল্লায় হাজির । অত:পর হেরেম শরীফ পৌছে তাওয়াফ করলাম এবং জমজমের পানি পান করলাম । তারপর তিনি বললেন আমাদের জন্য জমিন সংকোচিত হয়ে গেছে । এতে আশ্চর্যবোধ কর না । হেরেমের আশেপাশে মিশরের আমাদের অনেক পরিচিত লোক আছে তুমি চাইলে তাদের সাথে আসতে পার আর নয়ত আমার সাথে যেতে পার । আমি বললাম আমি আপনার সাথেই যা । তারপর আমি আবার চোখ বন্ধ করলাম এবং ৭ কদম যাবার পর চোখ খুলে দেখলাম আমারা মিশরে পৌছে গেছি ।

৯১১ হিজরীতে হাতের মাঝে ফোড়া হয়ে ১৯শে জুমাদাল উলা বৃহস্পতিবার তিনি ইন্তেকাল করেন ।


0 comments:

Post a Comment