কোন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার পিতা-মাতা, এবং তার সন্তান ও সমস্ত মানুষ থেকে আমাকে বেশি মোহাব্বত করবে। {সহীহ বুখারী শরিফ, হাদীস নং-১৫, সহীহ মুসলিম শরিফ, হাদীস নং-১৭৭}

Saturday, July 30, 2022

খাদ্য অপচয় করছেন তো ?

খাদ্য নিরাপত্তা বা food security।


খাদ্য নিরাপত্তা বলতে কি বুঝায়।


আসলে যখন খাদ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা যাবে এবং খাদ্য ব্যবহারের অধিকার কে নিশ্চিত করা যাবে তখনই এটাকে খাদ্য নিরাপত্তা বলা যাবে। একটি এলাকায় যতগুলো লোক আছে তার একজনও যখন ক্ষুধার্ত অবস্থায় থাকবে না অথবা উপবাসের কোন আশঙ্কা থাকবে না তখন ঐ এলাকাকে খাদ্য নিরাপদ বলে মনে করা হয়।


২০০৩ সালের বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (FAO) জরিপ অনুযায়ী, বিভিন্ন মাত্রার দারিদ্রতার কারণে প্রায় ২০০ কোটি লোক খাদ্য নিরাপত্তা হীনতায় বসবাস করে। তার উপরে আবার জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত আবাসনের প্রয়োজন হচ্ছে এবং শিল্প কারখানার জন্য কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী খনিজ তেলের দাম দিনকে দিন বেড়েই চলছে। জনসংখ্যার দিক থেকে চীন প্রথম এবং ভারত দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। বৃহৎ এ জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে বিশ্বব্যাপী খাদ্য দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে । এ কারণে অপেক্ষাকৃত কম আয়ের মানুষগুলোর পক্ষেও খাদ্য দ্রব্য বা অন্যান্য ভোগকৃত পণ্যের মূল্য নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। ঠিক এভাবেই ২০০ কোটি মানুষ খাদ্য নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে। আর নিতান্ত দরিদ্র পরিবারগুলো কেবল ক্ষুধার যন্ত্রণায় ভোগে না বরং এরা খাদ্য স্বল্পতায় এবং দুর্ভিক্ষের সময় এরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি।


রোমের সদর দপ্তরে ১৮৭ টি দেশের সমন্বয়ে ১৯৪৫ সালের গঠন করা হয় বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বা FAO। এই সংস্থাটির কাজ হচ্ছে ক্ষুধা দূর করা, অপুষ্টি দূর করা, খাদ্য নিরাপত্তা তৈরি করা, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং জনগণের জীবনমান উন্নয়ন করা । WHO বিশ্ব খাদ্য সংস্থার কাজগুলোকে তিনটি নীতি নির্ধারণ করে দেয়। এগুলো হলো:-

১. খাদ্যের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করা।

২. খাদ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা।

৩. এবং খাদ্যের ব্যবহার ও অপব্যবহার নিয়ে কাজ করা।


পরবর্তীতে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ৪ নাম্বার নীতি নির্ধারণ করে দেয় আর সেটি হল খাদ্যের স্থায়িত্ব নির্ধারণ করা। মানে উপরের তিনটি যাতে সব সময় স্থায়ী হয় সেজন্য খেয়াল রাখা।



এখন আসল কথা হলো, বিশ্বের যে পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন করা হয় তার তিনের একভাগ খাবার নষ্ট হচ্ছে। FAO এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে প্রতিবছর বিশ্বে ১৩৩ টন খাদ্য অপচয় হচ্ছে, যার আনুমানিক আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় ৭৫ হাজার কোটি ডলার। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বলছে যে, এই অপচয় হওয়া খাদ্যের চার ভাগের একভাগ খাবারও যদি অপচয় রোধ করা যায় তাহলে তা দিয়ে প্রায় ৮৭ কোটি মানুষের খাদ্যর প্রয়োজন মেটানো সম্ভব । 


অথচ বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। সোমালিয়ায় গেল দুর্ভিক্ষে প্রায় ৩০ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। পুরো বিশ্ব সেটা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছে। 


তাই আমরা সবাই সচেতন হই যাতে খাদ্য-অচয় না হয়। বিশেষ করে উচ্চবিত্ত শ্রেণীর লোকের খাদ্য অপচয়ের হার টা অনেক বেশি। আপনারা যদি খাদ্য অপচয় রোধ করতে পারেন তাহলে দেশের অনেক অনাহারী মানুষদের খাদ্যের অভাব থাকবে না। আমাদের সচেতনতাই রুখে দিতে পারে ৮৭ কোটি মানুষের অনাহারে থাকা।


খাদ্যের অভাব রোধ করার জন্য সরকারের অবশ্যই কিছু করণীয় রয়েছে। হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন কিভাবে খাদ্য উৎপাদন করতে হয়, খাদ্য সংরক্ষণ ও মজুদ এবং সরবরাহ করতে হয়। আমাদের বাংলাদেশে খাদ্যশস্য এখন সিন্ডিকেটের হাতে বন্দি। দেশের সরকার এদিকে নজরদারি রাখতেন তাহলে দেশের অনেক মানুষ অন্ততপক্ষে দুবেলা দু মুঠো ভাত ভালোভাবে খেতে পারত।




Thursday, April 21, 2022

মহা দুর্ভিক্ষ ।। ইসলাম ও ইতিহাস।

 ইতিহাসে এক মহা দুর্ভিক্ষের ঘটনা।

মহাদুর্ভিক্ষ।। famine


তখন হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিশরের বাদশা হয়ে গেলেন। তিনি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে লাগলেন এবং আসন্ন দুর্ভিক্ষের কথা চিন্তা করে খাদ্যশস্য উৎপাদন সংগ্রহ এবং বড় বড় খাদ্যভান্ডার তৈরি করতে লাগলেন। তারপর উনার দেখা স্বপ্ন অনুযায়ী দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। চারিদিকে খাদ্যের জন্য হাহাকার লেগে গেল। সমগ্র দেশ এর কারণে মহা বিপদে পতিত হলো। তখন সবাই খাদ্য ক্রয়ের জন্য মিশরের দিকে আসতে লাগলো। হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউকে একটি উটের বেশি বোঝাই করা খাদ্যশস্য দিতেন না। এর কারণ হলো যাতে করে সবাই সমানভাবে খাদ্যশস্য ক্রয় করে নিতে পারে।


তখনকার কেনান শহরে এর দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে হযরত ইয়াকুব আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুত্র বেনিয়ামীনকে রেখে বাকি ১০ ছেলেকে মিশরে পাঠালেন খাদ্যশস্য ক্রয় করার জন্য। যখন এই দশ ভাই খাদ্যশস্য ক্রয়ের জন্য হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হলেন তখন হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ১০ ভাইকে দেখে চিনে ফেললেন। কিন্তু তারা কিছুতেই হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে চিনতে পারলো না। কারণ তারা ভেবেছিল এত দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে হযরত ইউসুফ আলাইহিস সাল্লাম হয়তোবা মারা গেছেন বা হারিয়ে গেছে। হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এমন শাহিন পোশাক পরা অবস্থায় তারা কখনো কল্পনাই করতে পারেনি যে ইনি তাদের সেই ছোট্ট ভাই হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম হবেন। তারাই ইব্রানি ভাষায় হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কথা বললেন এবং হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম ও ইবরানী ভাষা জানতেন। হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন যে তোমরা কোথা হতে এসেছ? প্রশ্নের জবাবে তারা বলল আমরা সিরিয়া শহর থেকে এসেছি আমাদের সিরিয়াতে মহাদুর্ভিক্ষ পতিত হয়েছে। তাই আমরা এসেছি আপনার কাছে খাদ্য ক্রয় করতে।


হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে প্রশ্ন করলেন, তোমরা গোয়েন্দা নাতো? তখন তারা কসম করে বলল না না আমরা গোয়েন্দা নই। আমরা সবাই আপন ভাই এবং এক বাপের সন্তান আমরা। আমাদের বাবা একজন বড় বুজুর্গ ব্যক্তি এবং আল্লাহর একজন নবী। অতঃপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন তোমরা কয় ভাই? তারা বলল আমরা ১২ ভাই ছিলাম। কাজের মধ্যেও আমাদের এক ভাই জঙ্গলে হারিয়ে যায়। সে আমাদের আব্বাজানের সবচেয়ে প্রিয় সন্তান ছিল। তার আপন ভাই কে আমাদের আব্বা রেখে দিয়েছেন। এতে করে তিনি মনে একটু শান্তি অনুভব করেন।


হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই ১০ ভাইকে খুব আদর আপ্যায়ন করলেন। অবশেষে প্রত্যেক ভাইকে একটি করে উট বোঝাই খাদ্যশস্য দিলেন। পথের যাতে কোনো সমস্যা না হয় সে জন্য খাদ্য সামগ্রী দিলেন। সবশেষ বিদায়বেলায় বললেন পরের বার যখন তোমরা আসবে তখন তোমাদের সেই ভাই কেউ নিয়ে আসবে যেন সেও আরেকটি অতিরিক্ত উট বোঝাই খাদ্যশস্য নিয়ে যেতে পারে। আর যদি তোমরা ওকে আনতে না পারো তাহলে তোমরাও আর কোন খাদ্য সামগ্রী পাবেনা। আর এদিকে হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর খাদেমদেরকে বললেন যেন খাদ্যশস্য বাবদ যে টাকা নেয়া হয়েছিল সেটা যেন সেই খাদ্যশস্য বোঝাই উট এর মাঝে দিয়ে দেয়া হয়।


তারপর তারা ১০ ভাই খাদ্যশস্য নিয়ে কেনান শহরে ফিরে এলো এবং মিশরের বাদশার খুব প্রশংসা করতে লাগলো। তারা তাদের পিতা হযরত ইয়াকুব আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সমস্ত ঘটনা খুলে বললো। তারপর তারা খাদ্যশস্য বোঝাই উট থেকে বস্তাগুলো নামিয়ে খুলে দেখতে লাগলো। এবং তারা দেখতে পেল সেই বস্তা গুলোর ভিতরে তাদের দেয়া টাকাগুলো রয়ে গেছে। তারা হযরত ইয়াকুব আলাই সাল্লাম কে বলল আব্বা জান এই বাদশাহ তো অনেক বড় দয়ালু এবং দানশীল। আব্বাজান দেখুন আমরা খাদ্যশস্য বাবদ যে টাকাগুলো দিয়েছিলাম এটা এই বাদশা ফেরত দিয়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয় উনি এও বলে দিয়েছেন যে, পরেরবার আমরা যখন খাদ্যশস্য কেনার জন্য সেই বাচ্চার কাছে যাব তখন যেন আমরা আমাদের আরেক ভাই বেনিয়ামীনকে সাথে করে নিয়ে যাই। এবং তিনি এটাও বলে দিয়েছেন যে আমরা যদি বেনিয়ামীনকে নিয়ে না যায় তাহলে উনি আর খাদ্যশস্য দিবেন না। সুতরাং আব্বাজান আপনি পরেরবার বেনিয়ামীনকে আমাদের সাথে দিবেন যাতে করে সে তার ভাগের খাদ্যশস্য টুকু নিতে পারে। কথা শুনে হযরত ইয়াকুব আলাই সাল্লাম তাদেরকে বললেন এর আগের বার বেঞ্জামিনের ভাই ইউসুফকে তোমাদের সাথে দিয়ে ছিলাম। এবার বেনিয়ামীনকে দিয়ে তোমাদের উপর কিভাবে ভরসা করতে পারি। ওরা বলল আব্বাজান আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি আমরা নিশ্চয়ই ওর হেফাজত করব। আপনি কোন রকম দুশ্চিন্তা করবেন না। তারপর অনেক অনুনয় বিনয় পড়ার পর হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সাল্লাম বললেন, ঠিক আছে, আল্লাহ হেফাজতকারী পরেরবার তোমরা বেনিয়ামীনকে সাথে নিয়ে যেতে পারবে। অতঃপর এরা বেনিয়ামীনকে নিয়ে পুনরায় মিশরে গেল এবং ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে হাজির হয়ে বলল, জনাব আমাদের একাদশ ভাইকেও আমরা আমাদের সাথে নিয়ে এসেছি। হযরত ইউসুফ আলাইহিস সাল্লাম খুবই খুশি হলেন এবং ওদের সাদর সম্ভাষণ জানালেন এবং শাহী ভোজের ব্যবস্থা করে এক লম্বা দস্তরখানা বিছিয়ে সামনাসামনি দুজন দুজন করে বসতে বললেন। অতঃপর ওরা ১০ ভাই দুজন দুজন করে বসে গেলেন। বিন ইয়ামিন একাকী রয়ে গেল। তখন হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমাদের এক ভাই তো একাকী রয়ে গেল। সেহেতু আমি ওকে আমার সাথে বসাচ্ছি। অতএব বেনিয়ামিন এর সাথে হযরত ইউসুফ আলাই সাল্লাম নিজেই বসে গেলেন এবং ওকে বললেন তোমার হারানো ভাই ইউসুফ এর জায়গায় যদি আমি তোমার আপন ভাই হয়ে যাই তাহলে কি তুমি পছন্দ করবে? কথা শুনে বেনিয়ামিন বললেন সুবাহানাল্লাহ। আপনার মত যদি ভাই পাওয়া যায় তাহলে বড় সৌভাগ্যের বিষয়। হযরত ইয়াকুব এর কলিজার টুকরা ও রাহিলের নয়নমণি তো আর আপনি হতে পারেন না। ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা শুনে কেদে দিলেন এবং বেনিয়ামীনকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন আর বললেন আমি তোমার আপন ভাই ইউসুফ। আর শোনো ইরা যা কিছু করেছে তার জন্য মন খারাপ করোনা কারণ এটা আল্লাহর বড় অনুগ্রহ যে তিনি আমাদেরকে একত্রিত করেছেন। আরো বললেন এ রহস্যের কথা তার ভাইদের যেন না বলে। এ কথা শোনার পর বেনিয়ামিন আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল।


শিক্ষা: আল্লাহ ওয়ালা গন শত্রুতা কারীদের সাথে ভালো ব্যবহার করে থাকেন। তাদের কখনো অপকার করেন না বরং বিপদে-আপদে তাদের উপকার করে থাকেন।


Monday, April 18, 2022

ওস্তাদ নাকি সাগরেদ ।

 



হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম যখন একটু বড় হয়ে উঠলেন এবং তিনি এদিক-সেদিন ঘোরাফেরা করতে থাকেন। এ অবস্থায় হযরত মারিয়াম আলাইহিস সাল্লাম মনস্থির করলেন যে তিনি ঈসা আলাইহিস সাল্লাম কে শিক্ষকের কাছে নিয়ে যাবেন। তখন হযরত মারিয়াম আলাইহিস সাল্লাম হযরত ঈসা আলাই সাল্লাম কে শিক্ষকের কাছে নিয়ে গেলেন এবং বললেন তাকে যেন পড়ানো হয়। শিক্ষক হযরত ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে বললেন যে, হে ঈসা পর বিসমিল্লাহ। তখন ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। শিক্ষক পুনরায় আবার বলতে বললেন আবার পড়া আলিফ বা যাল জিম। তখন ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন আচ্ছা আপনি কি এগুলো অর্থ জানেন? তখন শিক্ষক বললেন না আমি এগুলো অর্থ জানিনা। এরপর ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন আচ্ছা তাহলে আমার কাছ থেকে শুনুন। আলিফ দ্বারা আল্লাহ, বা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি, যাল ধারা আল্লাহর জালালিয়াত এবং দাল ধারা আল্লাহর দ্বীনকে বোঝানো হয়েছে। এ কথা শোনার পর শিক্ষক হযরত মরিয়ম আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হযরত ঈসা আলাই সাল্লাম কে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেন। তিনি বললেন এ ছেলে কোন শিক্ষকের মুখাপেক্ষী নয়। দেখছেন না আমি একে কি পড়াবো বরং সে আমাকে পড়াচ্ছে।


Tuesday, February 22, 2022

হযরত ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবিত আছেন।

 হযরত ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবিত আছেন।



ইহুদিরা হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের সবচেয়ে বড় দুশমন ছিল। তারা  আলাইহিস সালামকে সহ্য করতে পারত না। একদিন ইহুদিদের একটি দল হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে এই বলে গালিগালাজ করতে লাগলো যে তুমি জাদুকর তোমার মা ও জাদুকর । এবং বলল তুমি অসৎ এবং তোমার মাও একজন অসতী। একথা শুনে হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম মনে অনেক কষ্ট পেলেন। এবং আল্লাহ তাআলার কাছে ফরিয়াদ করলেন হে আল্লাহ, আমি তোমার একজন নবী। এসব লোকেরা আমাকে এবং আমার মাকে যা তা বলছে। অতএব তুমি এই সব লোকদের তোমার আজাবের মজা দেখাও। তখন আল্লাহ তাআলা ঈসা আলাইহিস সালামের দোয়া কবুল করলেন এবং ইহুদিদের ওই দলকে বানরে এবং শুকর পরিণত করলেন।


 এ হেন ঘটনা যখন ইহুদীদের প্রধান জানতে পারল তখন সে খুব ঘাবড়ে গেল এবং ভয় পেয়ে গেল যে তাদের সব ইহুদিদেরকে এরকম বানর ও শূকরে পরিণত করে ফেলতে পারে। তারপর সে সকল ইহুদিদের একত্রিত করল এবং বলল যেকোন উপায়ে ঈসা কে হত্যা করতে হবে। এদিকে হযরত জিবরীল আমীন হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম জানিয়ে দিলেন যে ইহুদীরা আপনাকে হত্যা করতে আসবে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা আপনাকে জীবিত অবস্থায় আসমানে উঠিয়ে নিবেন।


এরপর ইহুদিরা সব একত্রিত হল এবং হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের ঘর ঘিরে ফেলল। তারপর এক ব্যক্তি কে হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম এর ঘরে পাঠানো হলো দেখে আসার জন্য। তখন আল্লাহ তাআলা হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম কে জীবিত অবস্থায় আসমানে উঠিয়ে নিলেন এবং সেই ইহুদি যে ঘরে প্রবেশ করেছিল তাকে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের রূপ দেয়া হল। এরপর কিছুসংখ্যক ইহুদি হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের ঘরে প্রবেশ করল এবং নিজেদের সেই লোকটিকে ঈসা আলাইহিস সাল্লাম মনে করে তাকে হত্যা করে ফেলল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর তারা ভাবতে লাগলো তাদের নিজেদের সেই লোকটিকে যারা তাকে পাঠিয়েছিল সে কোথায়। আর এই লোকটি যদি তাদের লোক হয় তবে ঈসা কোথায় আর যদি এই লোক ঈসা হয় তাহলে তাদের পাঠানো সে লোকটি কোথায়? 🤔


এখন ইহুদীরা ধারণা করতে লাগল যে তারা ঈসা আলাইহিস সাল্লাম কে হত্যা করে ফেলেছে। কিন্তু আসলে প্রকৃতপক্ষে তারা ঈসা আলাইহিস সাল্লাম কে হত্যা করতে পারেনি। বরং তারা তাদের নিজেদের লোককে হত্যা করে ফেলেছে ঈসা মনে করে। আর ঈসা আলাইহিস সাল্লাম কে আল্লাহ তায়ালা জীবিত অবস্থায় আসমানে উঠিয়ে নেন।


Saturday, February 19, 2022

এক বুদ্ধিমতি বৃদ্ধার গল্প।

 একদা এক মাওলানা এক বৃদ্ধাকে প্রশ্ন করল। তুমি কি সারাজীবন চরকায় সুতা কেটে যাবে নাকি আল্লাহ খুদা কে জানার জন্য কিছু করলে? তখন বৃদ্ধা উত্তর দিলো এই চরকার ভেতর আমি আমার আল্লাহকে জানতে পেয়েছি। তখন মাওলানা সাহেব একটু বিস্মিত হয়ে বৃদ্ধাকে জিজ্ঞেস করলেন সেটা কিভাবে সম্ভব? 


মাওলানা সাহেব তখন বৃদ্ধা কে প্রশ্ন করল-আচ্ছা এবার বলুন তো দেখি আল্লাহ মজুদ আছেন কিনা। উত্তরে বৃদ্ধা বলল আল্লাহ সবসময় মজুদ আছে। মাওলানা সাহেব বলল কিভাবে? জবাবে বৃদ্ধা বললো এই দেখুন যতক্ষণ আমি এই চরকাটি চালাতে থাকি ততক্ষণ পর্যন্ত এটিই চলতে থাকে। যদি আমি এটাকে বন্ধ করে দেই তাহলে চরকাটি ও বন্ধ হয়ে যায়। তাই যদি এর ছোট চরকাটি চালানোর জন্য একজন চালক এর প্রয়োজন হয়, তবে এ বিশাল আসমান, জমিন, চাঁদ সূর্যের মতো বিশাল বিশাল চরকা গুলো চালানোর জন্য অবশ্যই কোন না কোন চালক এর প্রয়োজন হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত সে এগুলো চালাতে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই বিশাল আসমান জমিন চন্দ্র সূর্য তার নিজ গতিতে চলতে থাকবে। যখন সে এটাকে ছেড়ে দেবে তখন এগুলো চলা বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু আমি এখনো এগুলো চলতে থাকা বন্ধ হতে দেখিনি। এতে করে প্রমাণিত হয় যে, এগুলোর চালককের অবশ্যই মজুদ আছেন।


এবার মাওলানা সাহেব আবার প্রশ্ন করলেন, এখন বলুন তো দেখি এই আসমান-জমিনের চালক একজন নাকি দুইজন? বৃদ্ধা উত্তর করলো নিঃসন্দেহে একজন। সেটার প্রমানও আমার এই চরকা। যেমন আমি যখন চরকা কে চালনা করি তখন এই চরকা আমার মর্জি মোতাবেক চলে। এখন এই চরকার চালক যদি দুজন হত তাহলে অন্য চালক আমার সাহায্যকারী হয়ে তার মর্জি মোতাবেক চালাত। তাহলে দেখা যেত চরকার গতি বৃদ্ধি পেয়ে স্বাভাবিক গতির মধ্য তারতম্য সৃষ্টি হতো এতে করে উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটতো এবার সুতোর গুণগত মান নষ্ট হতো। আর যদি সে আমার মর্জি এর বিপরীত চালনা করত তাহলে চরকাটিকে সে উল্টোদিকে চালাত তাহলে চরকাটি হয়তো থেমে যেত না হয়তো ভেঙে যেতো। তাহলে যেহেতু এরকম কিছুই হয়নি অতএব বুঝে নিতে হবে এ বিশাল আসমান, জমিন, চন্দ্র, সূর্য তারকারাজির চালক অবশ্যই একজন।


এ থেকে বোঝা যায় সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা সর্বত্র বিরাজমান উনার কোনো ক্লান্তি নেই কোন অবসাদ নেই কোন ঘুম নেই। সৃষ্টি জগতের সবকিছুই ওনার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে।


Friday, April 2, 2021

পৃথিবীর প্রথম মানবী হযরত বিবি হাওয়া আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে কিছু কথা।

 হযরত আদম (আ.)-এর স্ত্রী বিবি হাওয়াা।

হযরত হাওয়া (আ.) পৃথিবীর প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী হযরত আদম (আ.)-এর স্ত্রী। হযরত আদম (আ.) আদি পিতা আর হযরত হাওয়া (আ.)পৃথিবীর সকল মানুষের মা। আল্লাহ তাআলা তাঁর বিশেষ শক্তির দ্বারা হযরত হাওয়া (আ.)কে হযরত আদম (আ.)-এর বাম পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করেছেন। তারপর হযরত আদম (আ.)-এর সাথে বিবাহ দিয়েছেন । তাঁদের উভয়কে জান্নাতে থাকার স্থান দিয়েছেন। আর জান্নাতের বিশেষ একটি গাছের ফল খেতে নিষেধ করেছেন। শয়তান তাঁদেরকে এই বলে ধোঁকা দিয়েছে যে, তােমরা এই গাছের ফল আহার করলে জান্নাতে চিরস্থায়ী হতে পারবে। তাঁরা শয়তানের ধোঁকায় পড়ে সেই গাছের ফল খেয়েছেন। তখন আল্লাহ তাআলা আদেশ করেছেন : তােমরা জান্নাত ছেড়ে পৃথিবীতে নেমে যাও। হযরত আদম (আ.) পৃথিবীতে এসে নিজের ভুলের জন্য খুব কেঁদেছেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর ভুলকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। ইতিপূর্বে হযরত হাওয়া (আ.) হযরত আদম (আ.) থেকে, আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন। (এক জয়ীফ বর্ণনামতে জান্নাত থেকে হযরত আদম [আ.]কে হিন্দুস্তানে এবং হযরত হাওয়া আ.Jকে জেদ্দায় নামানো হয়েছিল ।) আল্লাহ তাআলা উভয়কে একত্রিত করে দিয়েছেন। অতঃপর তাঁদের থেকে অসংখ্য সন্তান সন্ততি হয়েছে।





Sunday, April 14, 2019

মুসলিম বিজ্ঞানীরাই হল সকল আবিষ্কারের মহানায়ক ।


ইসলামে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান ।  



জ্ঞান-বিজ্ঞান, চিকিৎসা ,শিল্প, সাহিত্য ও বিশ্বসভ্যতায় মুসলমানদের শ্রেষ্ঠ অবদান রয়েছে তা আমরা অনেকেই জানিনা। পাশ্চাত্য সভ্যতার ধারক বাহক এবং তাদের অনুসারীরা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মুসলিম মনীষীদের নাম কে মুসলমানদের  স্মৃতিপট থেকে চির তরে মুছে ফেলার জন্য ইসলামের ইতিহাস এবং মুসলিম বিজ্ঞানীদের নাম কে বিকৃতভাবে লিপিবদ্ধ করেছে। বলে ইতিহাস না জানার কারণে অনেকেই এ কথা অকপটে বলতেও দ্বিধা করে না যে, সভ্যতার উন্নয়নে তেমন কোনো অবদান নেই। অথচ  মুসলমানগণই জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখা প্রশাখা আবিষ্কার করে গিয়েছেন। তাঁদের মৌলিক আবিষ্কার এর উপরেই বর্তমান জ্ঞান বিজ্ঞানের অধিষ্ঠান। তাই আলোচ্য প্রবন্ধে কিছু মুসলিম মনীষীদের জ্ঞান বিজ্ঞানের অবদান এর কথা আগামী প্রজন্মের নিকট তুলে ধরতে চাই।

জাবির ইবনে হাইয়ান
 সর্বপ্রথম নাইট্রিক অ্যাসিড আবিস্কার, সালফিউরিক অ্যাসিড আবিস্কার, ও নাইট্রিক এসিড স্বর্ণ গলানোর ফর্মুলা আবিষ্কারের একমাত্র জনক হল মুসলিম বিজ্ঞানী জাবির ইবনে হাইয়ান। স্বর্ণ গলানোর পদার্থের নাম ”অ্যাকোয়াবিজিয়া” নামটি তার দেয়া। তিনি চামড়াও কাপড়ে রং করার প্রণালী, ইস্পাত প্রস্তুত করার পদ্ধতি ওয়াটার প্রুফ  কাপড়ে বার্নিশ করার উপায় আবিষ্কারের জনক। এছাড়াও তিনি স্বর্ণ ও পরশ পাথর তৈরি করতে পারতেন। অন্য ধাতুর সঙ্গে মিশ্র স্বর্ণকে কুপেলেশনপদ্ধতিতে বিশুদ্ধ করার পদ্ধতি ও তার আবিষ্কারক।এর বাহিরে তিনি চিকিৎসাশাস্ত্র, দর্শন,  যুক্তি বিদ্যা, রসায়ন, জ্যামিতি, জ্যোতির্বিদ্যা জ্যোতির বিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞান ও কাব্য সম্পর্কে  2000 এর বেশি গ্রন্থ রচনা করেন।

ইবনুন নাফিস
 মানবদেহে রক্ত সঞ্চালনের ব্যবস্থা, শ্বাসনালী আভ্যন্তর অবস্থা, মানবদেহে বায়ু ও রক্ত প্রবাহের মধ্য ও ক্রিয়া প্রক্রিয়ার ব্যাপার, ফুসফুসের নির্মাণ কৌশল আবিষ্কার করেন এই মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানী। রক্ত চলাচল সম্বন্ধে তৎকালীন প্রচলিত  গ্যালন এর মতবাদকে ভুল প্রমাণিত করে চিকিৎসা বিজ্ঞানে 13 শতক শতাব্দীর বিপ্লবের সূচনা করেন তিনি। চিকিৎসা বিজ্ঞান ছাড়াও তিনি সাহিত্য, আইন, ধর্ম লজিক শাস্ত্রের অগাধ পাণ্ডিত্য অধিকারী ছিলেন।

আল বাত্তানী
 এই মুসলিম মনীষী 20 বছর বয়সেই শ্রেষ্ঠ জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও পন্ডিত হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হন। তিনি ছিলেন একজন অংক শাস্ত্রবিদ ও জ্যোতিবিজ্ঞানী। চন্দ্র সূর্য গ্রহ নক্ষত্র প্রভৃতির প্রকৃতি ও সম্বন্ধে তার সঠিক তথ্য শুধুমাত্র অভাবনীয়ই বরং জ্যোতির্বিজ্ঞানী  টমেলি সহবহু বিজ্ঞানের ভুলো তিনি সংশোধন করেন।
 আল বাত্তানীই সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন যে, ত্রিকোনমিতি একটি স্বয়ং স্বাধীন বিজ্ঞান। তার সংস্পর্শের নির্জীব ত্রিকোণমিতিক হয়ে ওঠে। সাইন, কোসাইনের সঙ্গে ট্যানজেস্টের সম্পর্ক ও তার আবিষ্কার।


আল বেরুনী
 অধ্যাপক মাপা বলেন- আল বেরুনী শুধু মুসলিম বিশ্বের ওই নয় বরং তিনি ছিলেন সমগ্র বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী ব্যক্তি। ত্রিকোণমিতিতে তিনি বহু তথ্য আবিষ্কার করেছে। কোর্পা নিকাস বলেছে- পৃথিবীর সহ গ্রহ গুলো সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। অথচ কোর্পানিকাস এর জন্মের 425 বছর পূর্বে আল বেরুনী বলেছেন- বৃুত্তিক গতিতে পৃথিবী ঘুরে ।তিনি টামেলি ও ইয়াকুবের দশমিক অংকের ভুল ধরে তার সংশোধন করেন। তিনি সর্বপ্রথম প্রাকৃতিক ঝর্ণা এবং আর্টেসিয় কূপের রহস্য উদঘাটন করেন। তিনি এরিষ্টটলের হেবের গ্রন্থের 10 টি ভুল আবিষ্কার করেন। ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক তার আবিষ্কার। শুদ্ধ গণনায় আলবেরুনী একটি বিস্ময়কর পন্থা আবিষ্কার করেন যার বর্তমান নাম দা ফর্মুলা অফ ইনফর্মেশন।

 ইবনে সিনা
  মাত্র 17 বছর বয়সে সকল বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে। 19 বছর বয়সে তিনি বিজ্ঞান,  দর্শন, ইতিহাস,  অর্থনীতি, রাজনীতি গণিতশাস্ত্র, জ্যামিতি, ন্যায় শাস্ত্র, চিকিৎসা শাস্ত্র ইত্যাদিতে মহা পাণ্ডিত্য অর্জন করে। একুশ বছর বয়সে তিনি আল মজমুয়া নামক একটি বিশ্বকোষ রচনা করেন। পানি ও  ভূমির মাধ্যমে যে সকল রোগ ছড়ায় তা তিনি আবিষ্কার করেন। তার লেখা আল কানুন 5 টি বিশাল খন্ডে বিভক্ত পৃষ্ঠা সংখ্যা চার লাখেরও বেশি, খেতে শতাধিক জটিল কারণ ও সমাধানের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া হয়। প্রকৃতপক্ষে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হল ইবনে সিনা ।

ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি
 ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি সর্বপ্রথম ইসলামী   জ্ঞান, বিজ্ঞান, দর্শন, ও সাহিত্যে ইসলামের পুনর্জাগরণ ঘটিয়েছেন। এছাড়াও অংক শাস্ত্র ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী ছিল তার বিশেষ আগ্রহ। এ সম্পর্কে তাঁর বিষয় ছিল ম্যাজিক স্কয়ার। সাবিত ইবনে কোরা ও ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি ব্যতীত ম্যাজিক স্কয়ার মুসলিম বৈজ্ঞানিকদের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে পারেনি। তিনি নক্ষত্রাদির গতি ও প্রকৃতি সম্বন্ধে বই রচনা করেন।

ইবনে খালদুন
 মাত্র ১৫ বছর বয়সে সে কুরআনের তাফসীর শিক্ষা শেষ করেন। দর্শন, রাজনীতি,  অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান ইতিহাস ইত্যাদি বিষয়ে ছিলেন তিনি সেরা পন্ডিত। তিনি বিখ্যাত আল মুকাদ্দিমা বইটি রচনা করেন। কিতাবের মাধ্যমে তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ সমাজবিজ্ঞান, ওই ও দার্শনিক সুখ্যাতি অর্জন করেন। আল মুকাদ্দিমায় তিনি যে মৌলিক চিন্তা ধারার পরিচয় দিয়েছেন তা পৃথিবীতে আজও বিরল। তিনি সমাজবিজ্ঞান ও বিবর্তনবাদ সম্পর্কে অনেক নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কার করেন। ইতিহাস সম্পর্কে তাঁর লেখা কিতাব আল  ইবর বিশ্বে প্রথম এবং সর্ব বৃহৎ ইতিহাস গ্রন্থ।

ওমর খৈয়াম
 ইউরোপিয়রা অত্যন্ত কৌশলে এ মহামনীষী কে বিশ্ব বিখ্যাত একজন বিজ্ঞানীর পরিবর্তে কেবলমাত্র একজন কবি হিসেবে পৃথিবীর মানুষের কাছে পরিচিতি করার চেষ্টা করেছেন। ওমর খৈয়ামের সর্বাধিক অবদান আলজাবরা অর্থাৎ বীজগণিত। জ্যামিতি সমাধান বীজগণিত এবং বীজগণিত সমাধানে জ্যামিতি পদ্ধতির আবিষ্কারক তিনি।ভগ্নাংশ সমীকরণের উল্লেখ্য ও সমাধান করে তিনি সর্বপ্রথম বীজগণিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন। বীজগণিত এর ক্ষেত্রে বাইনোমিয়াল থিউরিয়াস এর জনক তিনিই। অথচ ইবনে খালদুনের শতশত বছর পর বাইনোমিয়াল থিউরিয়াস কার বলে নিউটন আজও পৃথিবীতে বিখ্যাত।  গণিত জগতে  এলালিটিক  জিওমেট্রিক কল্পনা তিনি সর্বপ্রথম করেন। এছাড়াও তিনি একটি নতুন গ্রহ আবিষ্কার করেন। তিনি আরও ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী, চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও বিশ্ব বিখ্যাত কবি। কিন্তু মুসলিম জাতি আজও তার সম্পর্কে পুরোপুরি জানেনা।

ইবনে রুশদ
 তিনি দর্শন, ধর্মতত্ত্ব,আইন, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, ব্যাকরন ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর বহু বই রচনা করেন। তিনি গোলকের গতি সম্পর্কে একটি বই রচনা করেন ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর ২০টি বই রচনা করেন। তিনি কিতাব আল কল্লিয়াতি ‍ফিত ত্বীব বইটিতে অসংখ্য রোগের নাম লক্ষণ ও চিকিৎসা প্রণালী বর্ণনা করেন। এছাড়াও ইবনে রুশদ সংগীত ও ত্রিকোণমিতিতে অনেক বই রচনা করেন।

এছাড়াও আরো অনেক মুসলিম মনীষী অন্যান্য অনেক খাতে বিশেষ বিশেষ অবদান রেখেছেন যা আমরা আমাদের অজ্ঞতা ও না জানার দরুন এবং সংরক্ষণ ও গবেষণা মূলক প্রতিষ্ঠান অভাবে এসব মুসলিম মনীষীদের নাম ধীরে ধীরে ইতিহাস থেকে মুছে যাচ্ছে। যার কারনে দিন দিন লোপ পাচ্ছে এবং বিলুপ্ত হচ্ছে মুসলিম মনীষীদের স্বর্ণ গাঁথা ইতিহাস গুলো ।

ইসলাম সম্পর্কে নিত্যনতুন আরো অনেক ঘটনা ও ইতিহাস সম্পর্কে জানতে আমাদের এই ব্লগের সাথেই থাকুন।

Thursday, April 11, 2019

মদিনা সনদ প্রতিষ্ঠায় প্রথম বায়াতের ঘটনা ।



ইসলাম এবং রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় মদিনা সনদের পদক্ষেপ সমূহ
হুজুর আকরাম নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলাম প্রচারে তাঁর দাওয়াতি কর্মকে যতোটুকু সম্ভব প্রসারিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন। মক্কায় বিভিন্ন মেলা ও সামাজিক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত জনসাধারণের প্রতি তার দাওয়াতি কর্ম অব্যাহত রাখেন। যার ফলে মক্কার কাফেররা বাইরের লোকদের কাছে তাঁর ইমেজ নষ্ট করার জন্য এবং তাঁর থেকে দূরে রাখার চেষ্টায় লিপ্ত থাকতো। তাদের এই নেতিবাচক কর্মকান্ড একদিক থেকে ইসলামের প্রচার ও প্রসার কে ত্বরান্বিত করে এবং হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিচিতি কে বিস্তৃতি করে দেয় ।

মদিনা সনদ পর্ব-০২


নবুওয়াতের দশম সনে হজ্জের সময় এক রাতে হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরবের বিভিন্ন গোত্রের কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্যে বের হন। আকাবা নামক স্থানে খাযরাজ গোত্রের কিছু লোকের সাথে দেখা হলে তিনি তাদের পরিচয় জানতে চান। তারা নিজেদের খাযরাজগোত্রের লোক বলে পরিচয় দেয়। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন আপনারা কি ইহুদীদের প্রতিবেশী ?তারা বলল হা। তাদের সাথে পরিচয় গো প্রাথমিক আলাপচারিতায় হুজুর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম  প্রকৃত অর্থে মদিনা শরীফের পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং সেখানকার বিভিন্ন গোত্র সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য গুলি জানতে পারেন। হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাদেরকে ইসলামের প্রতি আহবান করেন এবং কুরআন পড়ে শোনান। পবিত্র কোরআনের বাণী শুনে তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি দারুন দারুণভাবে  মোহিত হন। আর সে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি ছিলেন হযরত  ইয়াস বিন মু’য়াজ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু । তিনি তাঁর সব গোত্রের লোকদের বলেন আল্লাহ  শপথ তোমরা এখানে যে উদ্দেশ্যে এসেছ তারচেয়ে দাওআত অনেক উত্তম। কিন্তু প্রতিনিধিদলের প্রধান তার কথায় প্রকাশ করল না, তবে হযরত  ইয়াস বিন মু’য়াজ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ইসলাম কবুল করেন। কোন কোন বর্ণনা অনুযায়ী প্রতিনিধিদলের সদস্যরা আরজ করেন যে, এখন আমাদের আউস ও খাযরাজ গোত্রের মধ্যে যুদ্ধ চলতেছে। যদি এ মুহূর্ত আপনি মদীনা শরীফে আগমন করেন, তবে উভয় গোত্র বাই’আত গ্রহণে সম্মত হবে না। যদি আপনি একটি বছর অপেক্ষা করেন এবং এর মধ্য উভয় গোত্র যুদ্ধ-বিগ্রহ ছেড়ে সন্ধিতে আবদ্ধ হয়, আউস ও  খাযরাজ একত্রিত হয়ে ইসলাম কবুল করবে। আগামী বছর আমরা আবার আসবো এবং তখন এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে । (তাবাকাতে ইবনে সাদ)

ইসলামের মর্মবাণী শোনার পর উক্ত প্রতিনিধিদলের সদস্যরা এই সত্যটুকু অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে, তিনিই  সর্বশেষ নবী। যার ব্যাপারে  ইহুদিরা প্রায় বলাবলি করত । তারা ইহুদিদের পূর্বে জানার অদম্য ইচ্ছা নিয়ে হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আহবানে সাড়া দিয়ে  ঈমান আনেন। এবং ইয়াসরিবকে ইসলামের কেন্দ্র বানানোর লক্ষ্যে সেখানে হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রথম প্রতিনিধি দল হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। যাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ইয়াসরিব  এ আনসারীদের ঘরে ঘরে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিল।

আকাবার প্রথম বায়াত
 নবুওয়াতের  এগারতম বর্ষে বার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল তাদের কৃত ওয়াদা অনুযায়ী মক্কায় হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে দেখা করতে আসেন।বার জনের মধ্য সাতজন ব্যতীত বাকি পাঁচজনের সাথে এর আগের বছর ও হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাক্ষাৎ হয়েছিল। তারা সবাই হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র হাতে বায়াত গ্রহণ করেন যেটা পৃথিবীর ইতিহাসে আকাবার প্রথম শপথ হিসেবে বিখ্যাত।

 বায়াত গ্রহণ কারী সম্মানিত সাহাবীগণ যারা ছিলেন
১. হযরত আবু উমামাহ  আসাদ বিন যুরারাহ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু
২. হযরত আওফ বিন হারেছ  রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু
৩. হযরত রাফে বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু
৪. হযরত উয়াইম বিন ছা’য়দাহ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু
৫. হযরত আবু হাইসাম মালিক বিন তাহইয়ান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু
৬. হযরত আব্বাস বিন উবাদাহ রাদি আল্লাহ তাআলা আনহু
৭. হযরত উবাদাহ বিন চামেত রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু
৮. হযরত খালেদ বিন মাখলাদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু
৯. হযরত যাকওয়ান বিন কাইছ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু
১০. হযরত মুয়াজ বিন হারাছ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু
১১. হযরত কুতাইয়াহ্ বিন আমের বিন হাদিদাহ্ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু
১২. হযরত উকবাহ্ বিন আমের রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু

হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের কাছ থেকে এই বিষয়ে  বায়াত গ্রহণ করেন
১. আমরা এক আল্লাহর ইবাদত করব এবং তাঁর সাথে কাউকে শরিক করব না
২. চুরি করা থেকে বিরত থাকব
৩. ব্যভিচার করব না।
৪. সন্তান সন্ততি বিশেষ করে কন্যা সন্তানকে  হত্যা করবো না।
৫. কারো ওপর মিথ্যা অপবাদ দেবো না।
৬. কুৎসা রটনা ওপর নেতা থেকে বিরত থাকব।
৭. সকল কাজে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আনুগত্য করব।

 আকাবার প্রথম আয়াত অনুষ্ঠানে যেসব বিষয়ের উপর বায়াত গ্রহণ করা হয়, তা মদিনা শরীফের একটি ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার ভিত্তি রচনা করে দেয়। উত্তর প্রতিনিধি  দলের কাছ থেকে একদিকে যেমন ইয়াসরিবের এর সকল পাপাচার, অত্যাচার সমূলে উৎখাত করার অঙ্গীকার নেয়া হয়েছিল অনুরূপভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের ওয়াদা ও নেয়া হয়েছিল। বায়াতের মদীনা শরীফে ফেরার সময় প্রতিনিধিদলের সদস্যরা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর নিকট তাদেরকে দ্বীন শিক্ষা দেয়ার জন্য তাদের সাথে একজন শিক্ষক প্রেরণের আবেদন পেশ করেন। তিনি তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং হযরত মাসয়াব বিন উমাইয়া রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুকে তাদের সাথে প্রেরণ করেন। এবং তিনি ইয়াসরিবের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি হযরত আস'আদ বিন যুরারাহ  রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর ঘরে অবস্থান করেন। হযরত মাসয়াব  বিন উমাইররাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মদিনা থেকে  কুবা পর্যন্ত ইসলাম প্রসার লাভ করে।আউস গোত্র প্রধান হযরত সা’আদ  বিন মু’য়ায রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ইসলাম গ্রহণ করলে সেই গোত্রের সকল লোক মুসলমান হয়ে যান।


আরো পড়ুন এই লিংকে
ইতিহাসে লিখিত প্রথম সংবিধান – মদিনা সনদ ।

Thursday, April 4, 2019

ইতিহাসে লিখিত প্রথম সংবিধান – মদিনা সনদ ।


ইতিহাসে লিখিত প্রথম সংবিধান মদিনা সনদ  কি এবং কেন?

মদিনা সনদ


 মানব সভ্যতার ইতিহাসে ইসলাম অতীব মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে আসীন।হযরত আদম আলাই সাল্লাম এর অবতরণের পর হতে মানব সমাজ সভ্যতা সংস্কৃতির বিকাশের অসংখ্য স্তর  পাড়ি দিয়েছে ।এ অগ্রযাত্রায় যে গতি ইসলামের  মাধ্যমে সঞ্চারিত হয়েছে তা হলো কোন ধর্ম জ্ঞান বিজ্ঞান মতবাদ বা সংস্কার মূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে সাধিত হয়নি ।ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম। যা মানুষের স্বভাব বা প্রকৃতির সাথে দারুন সামঞ্জস্যপূর্ণ এর তাৎপর্য হচ্ছে মানব গোষ্ঠীর অস্তিত্ব ও সুষ্ঠু অগ্রযাত্রায় ইসলামের মৌলিক নিয়ম নীতি অনুসরণের মধ্য নিহিত এবং এর মূলনীতি থেকে বিচ্যুতি আত্মহত্যার শামিল। মানবতার ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, দেশ বা জাতির প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য ইসলামের সত্যতা স্বীকার করে আইন কানুন এর প্রতি যত্নবান হয়েছে এবং অন্যত্র সামগ্রিক বিকাশ তাদের ভাগ্য নীতিতে পরিণত হয়েছে ।হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর  উত্তম আদর্শ এমন একটি মাপকাঠি যা ইসলামের মূলনীতির  বাস্তব বিশ্লেষণ। নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনের প্রতিটি ‍দিক মানব সমাজকে সত্যের দিশা দেয় ।

হুজুর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামী আন্দোলনকে সার্থক করে তুলতে যে পদ্ধতি অবলম্বন করেন তাতে দাওয়াতি, সমর জিহাদ, আইনি ও সাংবিধানিক, রাজনৈতিক ও সন্ধি ভিত্তিক প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত। আর এস পদক্ষেপ গ্রহণ এবং এর পিছনে তার সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অক্লান্ত পরিশ্রমের মূল উদ্দেশ্য ছিল সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা, মিথ্যা বিলুপ্ত করা এবং ইসলামের হক তথা সত্যধর্মকে বিজয় দান করা।  মদিনা সনদ হল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাজনৈতিক সন্ধি বিষয়ক এবং আইনি ও শাসনতান্ত্রিক প্রচেষ্টার এক অসাধারণ  প্রতিফলন।

মদিনার সনদ একদিকে যেমন   রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাওয়াত ও তাবলীগের ক্ষেত্রে নয়া দিগন্তের সূচনা করেছে, অন্যদিকে এ সনদ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ইসলামকে সর্বকালের জন্য এক অনন্য ও অতুলনীয় মর্যাদা দিয়েছে। মদিনার সনদ পৃথিবীর প্রথম লিখিত সংবিধান হওয়ার মর্যাদায় ভূষিত। আরবের মরুভুমিতে এক নিরক্ষর (উপমা দিতে গিয়ে বোঝানো হয়েছে)নবী এমন সময় পৃথিবীতে একটি পূর্ণাঙ্গ লিখিত সংবিধান উপহার দেয় যখন পৃথিবীতে কোন আইন বা সংবিধানের অস্তিত্ব ছিল না। আধুনিক ইউরোপের আইন ও সাংবিধানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল 1215 সনে, যখন ব্রিটিশ রাজা জন ম্যাগনাকার্টা স্বাক্ষর করেছিল। অথচ এর আরও 593 বছর পূর্বে 622 খ্রিস্টাব্দে মদিনা রাষ্ট্রের হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে একটি  পূর্ণাঙ্গ লিখিত সংবিধান দেয়া হয়েছিল।

 ব্রিটেন থেকে প্রকাশিত লাইব্রেরী অফ মর্ডান নোলেজে বিশ্ব রাজনীতি ও আইনি সংস্থা এবং এর অগ্রগতি কথা বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেন
The world first unified state of which we know was established in Egypt around 3200 BC……………………………. when the two Kingdoms of upper and lower Egypt were United. A Centralised and bureaucratic Empire eventually developed. Others Empire followed, notably those of Persia, China and Rome of all which covered vast areas of the world. But the state as it exists today is based on model that evolved in western Europe after the fall of the Roman empire in the 5th century A.D
                                           

আমাদের জানামতে বিশ্বে প্রথম সংঘটিত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয় খ্রিস্টপূর্ব  3200সনে মিশরে;  যখন মিশরের উভয় রাজ্য সংযুক্ত ও একীভূত হয়। এভাবে একটি কেন্দ্রীয় এবং নিয়মতান্ত্রিক সাম্রাজ্য অস্তিত্বে আসে। পরবর্তীতে যে সকল রাজত্বের উদ্ভব হয়, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইরান চীন এবং রোম সাম্রাজ্য। যা পৃথিবীর ব্যাপক  অংশে বিস্তৃত ছিল। কিন্তু বর্তমান বিশ্বের রাষ্ট্র ব্যবস্থা তার ভিত্তি প্রস্তর সেই  মানদন্ডের উপর প্রতিষ্ঠিত।যা  খ্রিস্টাব্দের পঞ্চম শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর ইউরোপে বিস্তার লাভ করে।

The next stage in the evolution of the state as we know it today was the development of the territorial state as a defined area of land with a single Meler…… By the end of the 17th century, this form of state was common all over the Europe.
p (reader biggest library of modern knowledge. volume 2 Ed.1979)
রাষ্ট্র ব্যবস্থার ক্রমবিকাশ এর পরবর্তী ধাপ ছিল অঞ্চলভিত্তিক রাজ্যের উত্থান যেটা সঙ্গে আজ আমরা পরিচিত। অর্থাৎ রাজ্য একটা নির্দিষ্ট এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হবে এবং এর একজন শাসক থাকবে। এই আদলের রাষ্ট্র ব্যবস্থা সতেরো শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত সমগ্র ইউরোপের অধিষ্ঠিত ছিল।
অর্থাৎ বিশ্বের রাজনৈতিক ও আইনি বিবর্তন বা ক্রমবিকাশের পুরো যাত্রায় ইসলামের কোন ভূমিকা পশ্চিমা দুনিয়ার লেখকদের নজরে পড়েনি। অথচ ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে পশ্চিমা বিশ্ব তাদের রাজনীতি ও আইনের বর্তমান পর্যায়ে পৌঁছাতে শত শত বছরের রাস্তা পাড়ি দিতে হয়েছে।

 ব্রিটেনে 1215 সনে ম্যাগনাকার্টা- 16 ই ডিসেম্বর 16 89 সনে Bill of rights,  1700 সনে The of sattlementএবং 1911 সনে The parliament act চূড়ান্ত করা হয়। আমেরিকায় 1787 সনে constitutional convention অনুষ্ঠিত হয় এবং ফ্রান্সের 1791 সনে জাতীয় সংসদ আইন মঞ্জুর করে।

 যদিও মানবাধিকার বা মানুষের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের সাংবিধানিক যাত্রা পশ্চিমা বিশ্ব 1215 সনে শুরু করলেও এরপর সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে আরো শত শত বছর অতিবাহিত হয়ে যায়। এর প্রমাণ হচ্ছে রাজ্য পরিচালনায় শাসকের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের নানা অভিযোগ দূরীকরণের লক্ষ্যে অভিযোগগুলোর সত্যতা যাচাই বাছাই করে সরকারকে এর রিপোর্ট দেয়ার জন্য সর্বপ্রথম 1809 সনে এক ব্যক্তিকে সুইডেনের নিয়োগ দেওয়া হয়। জাদ দীর্ঘ সময় ধরে আনুষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতি ছিল। অনেক বছর ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোকে পদ্ধতি গ্রহণ করে। অথচ হিজরী এক সনে মদিনার সনদের মাধ্যমে যে ইসলামের যাত্রা শুরু,সেটি 10 বছরের কম সময়ের মধ্যে আইন ও রাজনৈতিক অঙ্গনে সফলতা ও উৎকর্ষতার চরম পর্যায়ে আরোহন করে।

 হিজরী সনে যখন হুজুর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন, সর্বকালের মানবজাতির জন্য এক অনন্য ও আধুনিক দিক নির্দেশনা পূর্ণ ছিল। অতঃপর খোলাফায়ে রাশেদীনের সময়কাল এবং এর ধারাবাহিকতা এবং প্রতিক্রিয়া আরো বেগবান হয়েছিল। রাষ্ট্রের একজন সাধারন এতটুকু অধিকার ছিল যে, সে কোন ব্যাপারে খলিফার কাজের মূল্যায়ন করতে পারত। এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারত।

 আজ উন্নত বিশ্বের সংবিধান সমূহের মধ্যে সাত হাজার শব্দ ভান্ডার দ্বারা রচিত আমেরিকার সংবিধান কে একটি সংক্ষিপ্ত ও আদর্শ সংবিধান হিসেবে বিবেচনা করা হয় ।অথচ চৌদ্দশ বছর পূর্বে হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক প্রদত্ত 730 শব্দের মদিনার সনদ এর চেয়ে অনেক বেশি সুসংহত, যাতে সকল শ্রেণীর লোকের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। সরকারের দায়িত্ব পালনের পদ্ধতি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সংখ্যালঘুসহ সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে এবং একটি সফল ইসলামী রাষ্ট্রের প্রকৃত রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে ।

মদিনার সনদ সম্পর্কিত এ রচনাটি অধ্যাপক ডঃ মুহাম্মদ তাহের উল কাদেরী রচিত বই "মদিনার সনদ" থেকে নেয়া হয়েছে।



আরো জানতে ক্লিক করুন এই লিংকে

মদিনা সনদ প্রতিষ্ঠায় প্রথম বায়াতের ঘটনা ।

Monday, April 1, 2019

ইয়ামানের বাদশার রাজকীয় ভ্রমণকাহিনী ।



 কিতাবুল মুসততরফ হুজ্জাতুল্লাহ আলাল আলামিন ও তারিখে ইবনে আসাকির এ বর্ণিত আছে যে, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পৃথিবীতে আবির্ভাব এর এক হাজার বছর পূর্বে ইয়ামানের বাদশা ছিলেন তুব্বে আউয়াল হোমাইরি । 



তিনি একবার স্বীয় রাজ্য পরিভ্রমণে বের হয়েছিলেন ।তার সাথে ছিল বার হাজার আলেম ও হেকিম, এক লক্ষ বত্রিশহাজার অশ্বারোহী এবং এক লক্ষ তের হাজার পদাতিক সিপাই ।  এমন শান শওকতে বের হয়েছিলেন যে, যে যেখানেই গেছেন, এ দৃশ্য দেখার জন্য চারিদিক থেকে লোক এসে জমায়েত হয়ে যেত। ভ্রমণ করতে করতে যখন মক্কা নগরীতে পৌঁছলেন, তখন তার এ বিশাল বাহিনী কে দেখার জন্য মক্কা বাসীর কেউ আসলেন না । বাদশা আশ্চর্য হয়ে গেলেন এবং উজিরে আজম কে এর কারণ জিজ্ঞাস করলেন ।উজির ওনাকে জানালেন এ শহরে এমন একটি ঘর আছে যাকে বাইতুল্লাহ বলা হয় । এ ঘর ও এ ঘরের খাদেমগণ এবং এখানকার বাসিন্দাগণকে পৃথিবীর সমস্ত লোক সীমাহীন মর্যাদা করে । আপনার বাহিনী থেকে অনেক বেশি লোক নিকটবর্তী ও দূর-দূরান্ত থেকে এ ঘর জিয়ারত করতে আসে এবং এখানকার বাসিন্দাদের সাধ্যমত খেদমত করে চলে যায় ।তাই আপনার বাহিনীর প্রতি উনাদের কোন আকর্ষন নেই এটা শুনে বাদশা রাগ আসলো এবং কসম করে বললেন আমি এই ঘরকে ধূলিসাৎ করব এবং এখানকার বাসিন্দাগণকে হত্যা করব এটা বলার সাথে সাথে বাদশার নাক মুখ ও চোখ থেকে রক্ত ঝরতে লাগল এবং এমন দুর্গন্ধময় পুঁজ বের হতে লাগল যে ওর পাশে বসার কারো সাধ্য রইল না । এ রোগের নানা চিকিৎসা করা হলো কিন্তু কোন কাজ হলোনা । বাদশা সফরসঙ্গী ওলামা একরামের একজন আলেমে রব্বানী নাড়ী দেখে বললেন রোগ হচ্ছে আসমানী কিন্তু চিকিৎসা হচ্ছে দুনিয়াবী হে বাদশা মহোদয়, আপনি যদি কোন খারাপ নিয়ত করে থাকেন, তাহলে অনতিবিলম্বে সেটা থেকে তওবা করুন।বাদশা মনে মনে বায়তুল্লাহ শরীফ ও এর খাদেমগন সম্পর্কিত যে ধারণা করেছিলেন তা থেকে তওবা করলেন এবং সাথে সাথে রক্ত ঝরা ও পুঁজ পড়া বন্ধ হয়ে গেল ।আর সেই খুশিতে বাদশা বায়তুল্লাহ শরীফে গিলাফ চড়ানো এবং শহরের প্রত্যেক বাসিন্দাকে সাতটি করে সোনার মুদ্রা ও সাত জোড়া রেশমি কাপড় নজরানা দিলেন।অতঃপর এখান থেকে মদিনা-মনোয়ারা গেলেন এবং সফরসঙ্গী ওলামায়ে কেরামের মধ্যে যারা আসমানী কিতাব সমূহ সম্পর্কে বিজ্ঞ ছিলেন তারা সেখানকার মাটি শুকে ও পাথর পরীক্ষা করে দেখলেন যে, শেষ নবীর হিজরতের যে স্থানের যেসব আলামত তারা পড়েছিলেন এ জায়গার সাথে এর মিল দেখলেন।তখন তারা সংকল্প করলেন আমরা এখানে মৃত্যুবরণ করবো এবং এ জায়গা ত্যাগ করে কোথাও যাবো না আমাদের কিসমত যদি ভাল হয় তাহলে কোন এক সময় শেষ নবীর তাশরীফ আনলে আমরাও সাক্ষাৎ করার সৌভাগ্য লাভ করব অন্যথায় কোন এক সময় তাঁর পবিত্র জুতার ধূলি উরে এসে আমাদের কবরের উপর নিশ্চয়ই পতিত হবে যা আমাদের নাজাতের জন্য যথেষ্ট।এটা শুনে বাদশা ওসব আলেমদের জন্য চারশত ঘর তৈরি করালেন এবং সেই বড় আলেমে রব্বানীর ঘরের কাছে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উদ্দেশ্যে দোতলা বিশিষ্ট একটি উন্নত ঘর তৈরি করালেন এবং বলেন যে যখন তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশরীফ আনবেন তখন এই ঘরখানা যেন তাঁর আরামগা হয় । ওই চারশত আলেমগণ কে যথেষ্ট আর্থিক সাহায্য করলেন এবং বললেন আপনারা এখানে  স্থায়ী ভাবে  থাকুন ।অতঃপর সেই বড় আলেমের রব্বানীকে একটি চিঠি দিলেন এবং বললেন আমার এই চিঠি শেষ নবীর খেদমতে পেশ করবেন।যদি আপনার জিন্দেগীতে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আবির্ভাব না ঘটে তাহলে আপনার বংশধরকে ওসিয়ত করে যাবেন যেন আমার এ চিঠিখানা বংশানুক্রমে হেফাজত করা হয় যাতে শেষ পর্যন্ত শেষ নবীর খেদমতে পেশ করা হয় এরপর বাদশা দেশে ফিরে গেলেন ।

 এই চিঠি এক হাজার বছর পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে পেশ করা হয়েছিল। কিভাবে পেশ করা হয়েছিল এবং চিঠিতে কি লেখা ছিল তা শুনুন এবং হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শান মান এর বাস্তব নিদর্শন অবলোকন করুন।
অধম বান্দা তুব্বে আউয়াল হোমাইরা এর পক্ষ থেকে শফিউল মুজনাবিন সাইয়েদুল মুরসালিন মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি - হে আল্লাহর হাবিব, আমি আপনার উপর ঈমান আনতেছি এবং আপনার প্রতি যে কিতাব নাজিল হবে সেটার উপর ঈমান আনতেছি আর আমি আপনার ধর্মের উপর আস্থাশীল।অতএব যদি আমার আপনার সাথে সাক্ষাতের সুযোগ হয় তাহলে খুবই ভালো ও সৌভাগ্যের বিষয় হবে।আর যদি আপনার সাক্ষাৎ নসিব না হয় তাহলে আমার জন্য মেহেরবানী করে শাফায়াত করবেন এবং কিয়ামত দিবসে আমাকে নিরাশ করবেন না।আমি আপনার প্রথম উম্মত এবং আপনার আবির্ভাবের আগে আপনার বায়াত করছি।আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ এক এবং আপনি তার সত্যিকার রসূল (দরূদ)।

 ইয়ামানের বাদশার এ চিঠি বংশানুক্রমে ৪০০শত ওলামা একরাম এর পরিবারের মধ্য প্রাণের চেয়েও অধিক যত্নসহকারে রক্ষিত হয়ে আসছিল ।এভাবে এক হাজার বছর অতিবাহিত হয়ে গেল ওসব ওলামায়ে কিরামের সন্তান-সন্ততির সংখ্যা বেড়ে মদিনার অধিবাসী কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেল।এই চিঠি ও ওসিয়ত নামা ও সে বড় আলেমের রব্বানীর বংশধর এর মধ্য হাত বদল হতে হতে হযরত আবু আইউব আনসারী রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু এর হাতে এসে পৌঁছে।তিনি এটা তার বিশিষ্ট গোলাম আবু লায়লার হেফাজতে রাখেন । যখন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনা মনোয়ারার প্রান্তসীমায় পদার্পণ করেন, সুন্নিয়াতের ঘাটি সমূহ থেকে যখন তাঁর উষ্ট্রের দৃষ্টিগোচর তখন মদিনার সৌভাগ্যবান লোকেরা মাহবুবে খোদার অভ্যর্থনার জন্য নারায়ে রেসালতের স্লোগান দিয়ে দলে দলে এগিয়ে গেলেন, অনেকে ঘর বাড়ি সাজানো ও রাস্তাঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজে নিয়োজিত হলেন, অনেকে দাওয়াতের আয়োজন করতে লাগলেন।সবাই এটাই অনুনয়-বিনয় করেছিলেন যে, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে তাশরীফ রাখুক।হুযুর সাল্লাল্লাহু হে ওয়াসাল্লাম ফরমালেন যে, আমার উষ্ট্রের লাগাম ছেড়ে দাও এবং এটা যে ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে এবং বসে যাবে সেটাই হবে আমার অবস্থানের জায়গা।উল্লেখ্য যে, ইরানের বাদশা তুব্বে আউয়াল হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য যে দুতলা বিশিষ্ট ঘর তৈরি করেছিলেন সেটা তখন হযরত আবু আইয়ুব আনসারীর অধীনে ছিল।আর উটটিও সে ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। লোকেরা আবু লায়লাকে গিয়ে বললেন ইয়ামানের সেই বাদশার সেই চিঠি খানা হুজুরকে দিয়ে এসো ।অতঃপর সে যখন হুজুরের সামনে এসে হাজির হলো হুজুর (দরূদ) ওনাকে দেখে ফরমালেন, তুমি আবু লায়লা । এটা শুনে আবু লায়লা আশ্চর্য হয়ে গেল। পুনরায় ফরমালেন যে, আমি মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ(দরূদ),  ইয়ামানের বাদশাহর সেই চিঠিটা যেটা তোমার হেফাজতে আছে সেটা আমাকে দাও।অতঃপর আবু লায়লা সেই চিঠিটা হুজুরকে দিলেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চিঠি পাঠ করে ফরমালেন, বাদশা তুব্বা আউয়াল কে অশেষ মোবারকবাদ ।

Thursday, March 28, 2019

অন্যতম আউলিয়া শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তার (রহঃ) এর জীবনী ।


হযরত শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তার রহমাতুল্লাহ আলাইহে এর জীবনী 

শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তার রহমাতুল্লাহ আলাইহে এর জীবনী

হযরত শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তার এর প্রকৃত নাম মোহাম্মদ ইবনে আবু বক্কর ইব্রাহিম   ডাক নাম ফরিদ উদ্দিন আত্মার ছদ্মনামে কবিতা লিখতেন তিনি আতরের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করে হাত তার নামেই তিনি সারা বিশ্বের সুপরিচিত

 মধ্য এশিয়ার  নিশাপুর শহরে তার জন্ম  এবং আর পবিত্র মাজার সেখানে অবস্থিত   তার জন্ম তারিখ সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে তবে অনেকের মতে 513 হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন তাঁর সুদীর্ঘ জীবন এবং তার মৃত্যুর কারণ সম্বন্ধে ঐতিহাসিকগণ বলেন,  3 তারিখ  দস্যুদের হাতে শাহাদাত বরণ করেন

শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তার রহমাতুল্লাহ আলাইহে


তিনি প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করার পর এক  বড় ঔষোধালয় এর মালিক হন একদিন তিনি দোকানে বেচা কেনায় ব্যস্ত ছিলেন  এমন এক সময়   ফকির এসে বলল আল্লাহর নামে কিছু দান করুন ফকির কেমন ভাবে চিৎকার করলো এবং  হযরত শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তার রহমতুল্লাহি তার নিজ কাজে এতই মশগুল ছিলেন যে, ভিখারিকে কিছু দেয়া দূরে থাক তিনে উত্তর দেয়ার সময় টুকু পেলেন না ফকিন্নিরা সে বলল আহা নগণ্য দুনিয়া সামান্য ধন দিতে কুন্ঠিত, না জানি তুমি প্রাণ দিতে কত কুণ্ঠিত হবে এসব ভাবতে শুনে আত্মার রেগে গিয়ে বললেন,  তুমি যেভাবে দিবে আমি সেভাবেই  দিব ভিক্ষুক সাথে সাথেই বললো, বেশ আমার মতই দান করবে?  কথা বলতে বলতে সে  ভিক্ষার ঝুলিটি মাথার নিচে রেখে মাটির উপরেই শুয়ে পড়ে  মুখে কালেমা তৈয়বা পড়ে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ  উচ্চারণ করতে লাগলো দেখতে দেখতে সে অবস্থায় তার প্রাণ বের হয়ে গেল    ঘটনাটি আক্তারের মনে এতই প্রভাব বিস্তার করে যে,  তিনি  ভিক্ষুকের    কাফন দাফন সমাধা করে  নিজের বিরাট ঔষধালয় এবং কারখানার দান করে ভিক্ষুকের বেশ ধারণ করে রুকনুদ্দিন  আফাকের কাছে গিয়ে  তার খেদমতে থেকে মারেফতের জ্ঞান লাভের জন্য কয়েকবছর তরিকত শিক্ষায়  মশগুল হন তারপর তিনি হজের উদ্দেশ্যে গমন করেন এবং সেখানে অনেক মাশায়েখের সহবতে থেকে তরিকত শিক্ষায় মশগুল হন সর্বশেষ  মাজদুদ্দিন   বাগদাদীর হাতে বায়াত হন মারিফতের বহু উচ্চ স্তরে উন্নীত হলে স্বীয়  মোরশেদ গৌরব কারণ জগতের অন্যতম তাত্ত্বিক হিসেবে প্রসিদ্ধ লাভ করেন

হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি এর শাহাদাতের বর্ণনায় পাওয়া যায়,  তাতাড়ি দস্যুদের নিশাপুর লুণ্ঠনকালে   এক দস্যু শেখ সাহেব কে হত্যা করার জন্য আক্রমণ করে   তখন এক ব্যক্তি বলল মহামান্য আল্লাহর ওলী কে হত্যা করোনা পরিবর্তে তোমাদের সহস্ত্র আশ্রাফী বা মোহর আমি দেব শেখ সাহেব বলেন, এত স্বপ্ন মূল্যে আমাকে বিক্রি করো না আমার মূল্য আরো অনেক বেশি অধিক মূল্য পাবার আশায় তাতার দস্যু  শেখ সাহেব কে নিয়ে আরো কিছুদূর অগ্রসর হলেন এবং  আরো ব্যক্তি বলে পীর  সাহেবকে হত্যা না করে আমার হাতে ছেড়ে দাও বিনিময় তোমাকে একটি খরের বোঝা প্রদান করব এবারও শেখ সাহেব বলেন, হা দিয়ে দাও,আমার মূল্য এটা অপেক্ষাও কম দস্যু মনে করলো শেখ সাহেব ঠাট্টা করছে রাগ সামলাতে না পেরে সেই দস্যু হযরত শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তার সাহেবকে হত্যা করে ফেলল

হযরত মাওলানা জালালউদ্দিন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি বহুত জায়গায় শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্মার রহমাতুল্লাহ আলাইহে কে নিজের পথ প্রদর্শক ইমাম রূপে গ্রহণ করেছেন তার শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে বারবার নিজের রচিত   বহু বিশ্ব বিখ্যাত গ্রন্থ মসনবী শরীফে শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তার রহমাতুল্লাহ আলাইহির  প্রতি অসংখ্য তাজিম   সম্মান প্রদর্শন করেন এবং অনেক  সুখ্যাতি বর্ণনা করেছেন এমনকি তার বিখ্যাত গ্রন্থ শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তার কে নিয়ে একটি কবিতা সংযোজন করেছেন 

হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি এর উদ্ধৃতি টেনে হযরত মাওলানা শেখ নিজামী রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন ,একশত পঞ্চাশ বছর পর আল্লাহ পাক  শেখ  আত্তারী রহমতুল্লাহ আলাইহে এর উপর নূরের জ্যোতি নাজিল করেছেন বিশ্ব বিখ্যাত পারস্য কবি জামি রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন,  সেখ আত্তার এর কবিতায়  যেমন তৌহিদের  মহাত্ম্য  এবং মারিফতের গুপ্ত রহস্য পাওয়া যায়,তেমন আর কোনো সূফীর কবিতায় দৃষ্টিগোচর হয় না কারো কারো মতে  তার রচিত পদ্য গদ্যর গ্রন্থ সংখ্যা কুরআন শরীফের  সূরার  সম সংখ্যক বর্তমানে  তার রচিত মোট  114 থানা বই রয়েছে কাজী নুরুল্লাহ শোছতারী রহমাতুল্লাহ আলাইহেমাজালেসূল মুমিনীননামক গ্রন্থেও অনুরূপ অভিমত ব্যক্ত করেন যা হোক তা রচিত গ্রন্থ গুলোর মধ্যে বর্তমানে
.তাজকেরাতুল আউলিয়া
. মান কুত তায়র
.মুসিবত নামা
. আসরারনামা
. তাইসিরনামা
. এলাহি নামা
. দীওয়ান  নামা
.পান্দেনামা
. ওসিয়ত নামা
১০.খসরুগোল নামা
১১. শরহুল কলব ইত্যাদি বিখ্যাত

 শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তার রহমাতুল্লাহ আলাইহে নিজেকে সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র নিকৃষ্টতম মানুষ বলে মনে করতেন সম্ভবত এজন্যই তার নাম আর সারা পৃথিবীতে আরেক আল্লাহ প্রেমিক গণের মধ্যে অমর হয়ে আছে হযরত আক্তার এর একটি বৈশিষ্ট্য হলো যে, মাওলানা রুমির বিখ্যাত দর্শনশাস্ত্র মসনবী যার প্রধান উৎস হলেন তিনি নিজেই

হযরত  ফরিদ উদ্দিন আত্তার রহমাতুল্লাহ আলাইহের  রচিত গ্রন্থের বিষয়সূচি প্রকাশভঙ্গি অভিনব আল্লাহ এবং রাসূলের প্রশংসাবাদ খোলাফায়ে রাশেদীনের  সুখ্যাতি বর্ণনার পর  গল্পের মূল বক্তব্য এভাবে শুরু করেছেন প্রথমত:  গল্পে বর্ণিত ব্যক্তিগণকে পাখি কল্পনা করা হয়েছে যথা- হুদহুদ,তোতা,মোরগ,কবুতর, বুলবুল বাজ ইত্যাদি   একদিন এক সভায় একত্রিত হয়ে পাখিগুলো তাদের মধ্য থেকে একজন  বাদশাহ নির্বাচন করতে চাইল হুদহুদ এই পদের জন্য মোরগের নাম প্রস্তাব করে অন্যান্য পাখি এতে আপত্তি উত্থাপন করল হুদহুদ  একে একে প্রত্যেকের আপত্তি শুনতে লাগলো এবং একে এক এক করে প্রত্যেকটির উত্তর প্রদান করতে লাগলো অবশেষে সবাই এক বাক্যে সুসংবাদদাতা হুদহুদের প্রস্তাব সমর্থন করে মোরগকে সম্রাট স্বীকার করতে রাজি হল তারপর তার কার্য প্রণালী সম্পর্কে যা সাধারণত সালেকের  অর্থাৎ আল্লাহর পথের পথিকের মনে হয়, প্রশ্নোত্তর আকারে তা সন্নিবেশন করেন মানকেতুক তায়ের নামটি পবিত্র কোরআন শরীফের সূরা নামাল হতে গৃহীত হুদহুদ পাখি জ্ঞান বুদ্ধি তে শ্রেষ্ঠ ছিল বলে হযরত সুলাইমান আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খুব প্রিয় ছিল শেখ ফরিদউদ্দিনও তরিকতের গুঢ় তথ্যসমূহ হুদহুদ রূপ সালেক এর মুখ দিয়ে বর্ণনা করেছেন তিনি প্রথমে আল্লাহ পাকের প্রশংসা বর্ণনা পূর্ব নিজের অক্ষমতা দুর্বলতা নিষ্ক্রিয় তার উপর বিশেষ জোর দিয়ে আল্লাহতালার যে অসীম শক্তি সৃষ্টি দর্শনের সাধারণ মানব এমনকি নবীগণ পর্যন্ত স্তম্ভিত অভিভূত হয়েছিলেন তা সুললিত ফারসি ভাষায় প্রকাশ করেন হযরত ইয়াকুব নবী নিজ পুত্র হযরত ইউসুফ কে হারিয়ে যে সুদীর্ঘ 40 বছর কান্নাকাটি করেছিলেন তারপর সে বিষয়ে বর্ণনা করেন হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন নগণ্য গোলাম রূপে মিশরে বিক্রি হয়ে বিনা অপরাধে জেল অবস্থানের পর কিভাবে আবার আল্লাহ পাকের অসীম রহমতে নবুওয়াত বাদশাহী লাভ করেন এরপর তা বর্ণনা করেন

 হযরত আইয়ুব আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদীর্ঘ 18 বছর  নানা  কীটের খোরাক হয়ে অসীম যন্ত্রণার মধ্য ধৈর্য ধারণ করেছিলেন তারপর সে সম্পর্কে বর্ণনা প্রদান করেন অবশেষে  সরোয়ার কায়েনাতের পবিত্র জীবনের নানা রোগ মোজেজা বা অলৌকিক ঘটনা সমূহ বর্ণনা করে প্রমাণ করেন যে,স্বীয় অস্তিত্ব   আমিত্বের  বিলুপ্ত ব্যতীত  আল্লাহ তাআলার  অর্জন এর পক্ষে অসম্ভব তারাই হচ্ছেন তার প্রিয় পাত্র

 মনে হয় মুখে আপন প্রভুর কাছে অক্ষমতা, দুর্বলতা অজ্ঞতা প্রকাশ করে আল্লাহ ভীতি অপেক্ষা নিজের নফসকে অধিক ভয় করা প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য আর রাহমানুর রাহিম অত্যন্ত বিনয় নম্রতা সহ আবেদন করতে করতে মোনাজাত করতে হবে যে, হে আল্লাহ, এই অধম উপর ইসলামের জাহেরী গণ্ডির মধ্যে পড়ে আছে তোমার পবিত্র প্রেমের একটি কণা তাকে প্রদান কর

 হযরত ফরিদ উদ্দিন আত্তার রহমতুল্লা আলাইহি কবিতা ছাড়া গদ্য লেখাও পরিপক্ক ছিলেন