কোন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার পিতা-মাতা, এবং তার সন্তান ও সমস্ত মানুষ থেকে আমাকে বেশি মোহাব্বত করবে। {সহীহ বুখারী শরিফ, হাদীস নং-১৫, সহীহ মুসলিম শরিফ, হাদীস নং-১৭৭}

Saturday, July 30, 2022

খাদ্য অপচয় করছেন তো ?

খাদ্য নিরাপত্তা বা food security।


খাদ্য নিরাপত্তা বলতে কি বুঝায়।


আসলে যখন খাদ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা যাবে এবং খাদ্য ব্যবহারের অধিকার কে নিশ্চিত করা যাবে তখনই এটাকে খাদ্য নিরাপত্তা বলা যাবে। একটি এলাকায় যতগুলো লোক আছে তার একজনও যখন ক্ষুধার্ত অবস্থায় থাকবে না অথবা উপবাসের কোন আশঙ্কা থাকবে না তখন ঐ এলাকাকে খাদ্য নিরাপদ বলে মনে করা হয়।


২০০৩ সালের বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (FAO) জরিপ অনুযায়ী, বিভিন্ন মাত্রার দারিদ্রতার কারণে প্রায় ২০০ কোটি লোক খাদ্য নিরাপত্তা হীনতায় বসবাস করে। তার উপরে আবার জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত আবাসনের প্রয়োজন হচ্ছে এবং শিল্প কারখানার জন্য কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী খনিজ তেলের দাম দিনকে দিন বেড়েই চলছে। জনসংখ্যার দিক থেকে চীন প্রথম এবং ভারত দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। বৃহৎ এ জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে বিশ্বব্যাপী খাদ্য দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে । এ কারণে অপেক্ষাকৃত কম আয়ের মানুষগুলোর পক্ষেও খাদ্য দ্রব্য বা অন্যান্য ভোগকৃত পণ্যের মূল্য নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। ঠিক এভাবেই ২০০ কোটি মানুষ খাদ্য নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে। আর নিতান্ত দরিদ্র পরিবারগুলো কেবল ক্ষুধার যন্ত্রণায় ভোগে না বরং এরা খাদ্য স্বল্পতায় এবং দুর্ভিক্ষের সময় এরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি।


রোমের সদর দপ্তরে ১৮৭ টি দেশের সমন্বয়ে ১৯৪৫ সালের গঠন করা হয় বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বা FAO। এই সংস্থাটির কাজ হচ্ছে ক্ষুধা দূর করা, অপুষ্টি দূর করা, খাদ্য নিরাপত্তা তৈরি করা, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং জনগণের জীবনমান উন্নয়ন করা । WHO বিশ্ব খাদ্য সংস্থার কাজগুলোকে তিনটি নীতি নির্ধারণ করে দেয়। এগুলো হলো:-

১. খাদ্যের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করা।

২. খাদ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা।

৩. এবং খাদ্যের ব্যবহার ও অপব্যবহার নিয়ে কাজ করা।


পরবর্তীতে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ৪ নাম্বার নীতি নির্ধারণ করে দেয় আর সেটি হল খাদ্যের স্থায়িত্ব নির্ধারণ করা। মানে উপরের তিনটি যাতে সব সময় স্থায়ী হয় সেজন্য খেয়াল রাখা।



এখন আসল কথা হলো, বিশ্বের যে পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন করা হয় তার তিনের একভাগ খাবার নষ্ট হচ্ছে। FAO এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে প্রতিবছর বিশ্বে ১৩৩ টন খাদ্য অপচয় হচ্ছে, যার আনুমানিক আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় ৭৫ হাজার কোটি ডলার। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বলছে যে, এই অপচয় হওয়া খাদ্যের চার ভাগের একভাগ খাবারও যদি অপচয় রোধ করা যায় তাহলে তা দিয়ে প্রায় ৮৭ কোটি মানুষের খাদ্যর প্রয়োজন মেটানো সম্ভব । 


অথচ বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। সোমালিয়ায় গেল দুর্ভিক্ষে প্রায় ৩০ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। পুরো বিশ্ব সেটা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছে। 


তাই আমরা সবাই সচেতন হই যাতে খাদ্য-অচয় না হয়। বিশেষ করে উচ্চবিত্ত শ্রেণীর লোকের খাদ্য অপচয়ের হার টা অনেক বেশি। আপনারা যদি খাদ্য অপচয় রোধ করতে পারেন তাহলে দেশের অনেক অনাহারী মানুষদের খাদ্যের অভাব থাকবে না। আমাদের সচেতনতাই রুখে দিতে পারে ৮৭ কোটি মানুষের অনাহারে থাকা।


খাদ্যের অভাব রোধ করার জন্য সরকারের অবশ্যই কিছু করণীয় রয়েছে। হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন কিভাবে খাদ্য উৎপাদন করতে হয়, খাদ্য সংরক্ষণ ও মজুদ এবং সরবরাহ করতে হয়। আমাদের বাংলাদেশে খাদ্যশস্য এখন সিন্ডিকেটের হাতে বন্দি। দেশের সরকার এদিকে নজরদারি রাখতেন তাহলে দেশের অনেক মানুষ অন্ততপক্ষে দুবেলা দু মুঠো ভাত ভালোভাবে খেতে পারত।




0 comments:

Post a Comment