কোন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার পিতা-মাতা, এবং তার সন্তান ও সমস্ত মানুষ থেকে আমাকে বেশি মোহাব্বত করবে। {সহীহ বুখারী শরিফ, হাদীস নং-১৫, সহীহ মুসলিম শরিফ, হাদীস নং-১৭৭}

Saturday, March 9, 2019

কেমন ছিল মহানবী (সা:) এর চেহারা মোবারক ।

কেমন ছিল মহানবী (সা:) এর চেহারা মোবারক
পবিত্র মদিনা শরীফ


মহনবী (সা:) দেখতে কেমন ছিলেন ।


নুরানী চেহারা: হুজুর আকরাম মহানবী (স:) এর নুরানী চেহারা মোবারক জামালে এলাহীর দর্পন ও অসীম নুরের বহি:প্রকাশের আধার । বোখারি ও মুসলিম শরীফে হজরত বারা ইবনে আযিব (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, মহানবী (সা:) এর চেহারা মোবারক মানবকুলের মধ্যে সর্বাধিক সুন্দর ও কমনীয় । হজরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (দরূদ) এর চেয়ে সুন্দর কোন কিছুই আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি । হজরত আবু হুরায়রা (রা:) তাঁর কোন কিছুই দেখিনি কথাটি উল্লেখ করেছেন । তিনি কিন্তু কোন মানুষকে দেখেন নি অথবা কোন পুরুষকে দেখেনি – এরূপ বলেছেন ।তাঁর বর্ণনার মধ্যে অধিক ব্যাপকতা রয়েছে । নবী করিম (সা:) এর চেহারা বা আঙ্গিক সৌন্দর্যের আধিক্য বোঝানোই তাঁর উদ্দেশ্য । মোটকথা মহানবী (সা:) এর চেহারা বা সৌন্দর্য ও কমনীয়তা সমস্ত কিছুর উপর আগ্রগণ্য ছিল ।এ মর্মে তিনি আরও বলেছেন, নবী করিম (সা:) এর নূরানী চেহারাখানা এত উজ্জ্বল যে, সূর্যের উজ্জ্বলতাও তাঁর কাছে হার মেনেছে । যেমন কবি বলেছেন, রাতের পর এমন কোন দিবসের অভ্যুদয় ঘটেনি যা রাসূল (সা:) এর নুরানী চেহারা মোবারকের চেয়েও উজ্জ্বল । মোটকথা তাঁর নুরানী চেহারার জ্যোতির্ময়তার তুলনায় অন্য সব কিছুর উজ্জ্বলতা নেহায়েতই নগন্য ।

সহীহ বোখারী শরীফের হাদীস, হজরত বারা ইবনে আযিব (রা:) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, হুজুর আকরাম মুহাম্মদ (স:) এর নুরের আভাকে স্বচ্ছতা ও উজ্জ্বলতার দিক দিয়ে কি তরবারীর সাথে তুলনা করা যেতে পারে ? তিনি বললেন না । বরং তাঁর চেহারার উজ্জ্বলতা ছিলো চন্দ্রের ন্যায় । তরবারীর সাথে চেহারার তুলনা যথাযথ হতে পারে না । কেননা তরবারীতে গোলাকৃতি অনুপস্থিত । তাই তিনি চেহারা মোবারককে চাঁদের সাথে তুলনা করেছেন । চাঁদের মধ্যে চাকচিক্যতা আছে । তদুপরি গোলাকৃতিও আছে ।


ছহীহ মুসলিম শরীফের বর্ণনায় আছে, তিনি (বারা ইবনে আযিব) উত্তরে বললেন, ন্ । বরং হুজুর পাক সাল্লালাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর চেহারা মোবারক চন্দ্র ও সূর্যের ন্যায় । অর্থাৎ গোলাকার । যদিও চন্দ্রের তুলনায় সূর্যের মধ্যে কিরণ ও চাকচিক্যতা অধিক, তথাপি চন্দ্রের মধ্যে যে লাবণ্য আছে তা সূর্যে নেই ।আর লাবণ্য এমন এক সৌন্দর্য যা দেখলে অবর্ণনীয় পুলকানুভূতি লাভ করা যায় । এবং অন্তর আকৃষ্ট হয় । যার অনুভূতি কেবল সুস্থ সৌন্দর্যবোধ বিশিষ্ট ব্যাক্তির পক্ষেই সম্ভব । সীরাত বিশেষজ্ঞগণ উজ্জ্বলতা ও লাবণ্য শব্দ দুটিরমধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করে থাকেন । ছাহাবাত হযরত ইউসুফ (আঃ) এর গুণ আর মালাহাত আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর শাণে ব্যবহার হয়ে থাকে । এক্ষেত্রে হজরত মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম স্বয়ং নিজেই এরশাদ করেছেন যে, আনা মালিহ ওয়া আখি আছবাহ্ । মানে আমি লাবণ্যময় আর আমার ভাই ইউসুফ (আঃ) উজ্জ্বল ।


মহানবী সাল্লালাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর চেহারা মোবারক গোল ছিল তার মানে এই নয় যে, উনার চেহারা মোবারক বৃত্তাকার ছিল । কারণ বৃত্তাকার গোল হওয়াটা রূপ ও সৌন্দর্যের পরিপন্থি । বরং চেহারা মোবারক গোল ছিল বলতে এমন এক ধরনের গোল ছির যা দেখতে লম্বা নয় । এ ধরনের চেহারা রূপ , লাবণ্য ও সৌন্দর্য পৌরূষ ও ও মহত্বের নিদর্শন । কথিত আছে যে তাঁর চেহারা মোবারক ছিলো মুকালছাম মানে গোলগাল চেহারাকে বলা হয় । কাযী আয়ায (রহঃ) কর্তৃক রচিত কিতাবুশশিফা গ্রন্থে মুকালছাম এর বর্ণনা দেয়া হয়েছে ।যার চেহারায় চিবুক ছোট হয়ে থাকে তাকে মুকালছাম বলে ।আর চিবুক ছোট হওয়া মানে চেহারা গোলগাল হয়ে থাকে । 


নবী করীম (সাঃ) এর চেহারা মোবারকের এক বর্ণনায় এসেছে তিনি মোলায়েম মৃত্তিকাখন্ড সদৃশ ছিলেন । আরবী সহল নরম ও সমতল ভূমিকে বলা হয় । কোন কোন বর্ণনায় পাওয়া যায় সাইলুল হাদীত প্রবাহিত গন্ড । সাইলান মানে প্রবাহিত শব্দ থেকে যার উৎপত্তি ।

কোন কোন হাদীছে নবী করিম (সাঃ) চেহারা মোবারকের উপমা স্বরূপ এক ফালি চাঁদ বা অর্ধচন্দ্র ইত্যাদির বর্ণনা এসেছে । বিভিন্ন কবিতায় এরকম উপমা উপস্থাপন করা হয়েছে । হজরত কাব ইবনে মালিক (রাঃ) যিনি সাহাবাগণের মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত কবি ছিলেন – তাঁর কবিতায় এরকম উপমা দেখা যায় । হজরত জুবাইর ইবনে মুৎইম (রাঃ) বলেন – একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে এমনভাবে মুখ ফিরিয়ে তাকালেন যাতে মনে হল যেনো একখানা অর্ধচন্দ্র । ছহীহ বোখারী শরীফে হজরত কাব ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ললাট মোবারক যখন ভাঁজ পড়ত তথন চেহারা মোবারক চাঁদের ফালির মত ঝকঝক করত । হুজুর পাক সাল্লালাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর চেহারা মোবারককে এক ফালি চাঁদের সাথে তুলনা দেয়ার অর্থ হল এই যে, এক ফালি চাঁদে যেমন কলংক খুজে পাওয়া যায় না তেমন আমাদের নবী হুজুরপাক (সাঃ) এর চেহারা মোবারক ছিল কলংকহীন । আর কোন কিছুকে যখন চাঁদের সাথে তুলনা করা হয় তখন চাঁদের কলংককে বাদ দিয়ে তখন তার জ্যোর্তিময়তাকেই বোঝানো হয় ।

সাইয়্যেদুনা হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এ চেহারা মোবারক ছিলো আলোকোজ্জ্বল বৃত্তাকার চাঁদের ন্যায় । ফারসী ভাষায় যাকে বলা হয় খিরমনশাহ । আল্লামা শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) বলেণ, আমার মনে হয় চাঁদের জ্যোৎস্নাকে এবং তার আলোকময় বৃত্তকে দেহের সাথে তুলনা করার মাধ্যমে হুজুর পাক (সাঃ) এর চেহারার ঐ আভার প্রতিই প্রকাশ্যভাবে ইঙ্গিত করা হয়েছে যা নূরের আকৃতিকে চন্দ্রের বৃত্তের ন্যায় চেহারা মোবারককে বেষ্টন করে নিয়েছে ।

0 comments:

Post a Comment