ইসলামে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান ।
জ্ঞান-বিজ্ঞান, চিকিৎসা
,শিল্প, সাহিত্য ও বিশ্বসভ্যতায় মুসলমানদের শ্রেষ্ঠ অবদান রয়েছে তা আমরা অনেকেই জানিনা।
পাশ্চাত্য সভ্যতার ধারক বাহক এবং তাদের অনুসারীরা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মুসলিম মনীষীদের
নাম কে মুসলমানদের স্মৃতিপট থেকে চির তরে মুছে
ফেলার জন্য ইসলামের ইতিহাস এবং মুসলিম বিজ্ঞানীদের নাম কে বিকৃতভাবে লিপিবদ্ধ করেছে।
বলে ইতিহাস না জানার কারণে অনেকেই এ কথা অকপটে বলতেও দ্বিধা করে না যে, সভ্যতার উন্নয়নে
তেমন কোনো অবদান নেই। অথচ মুসলমানগণই জ্ঞান-বিজ্ঞানের
সকল শাখা প্রশাখা আবিষ্কার করে গিয়েছেন। তাঁদের মৌলিক আবিষ্কার এর উপরেই বর্তমান জ্ঞান
বিজ্ঞানের অধিষ্ঠান। তাই আলোচ্য প্রবন্ধে কিছু মুসলিম মনীষীদের জ্ঞান বিজ্ঞানের অবদান
এর কথা আগামী প্রজন্মের নিকট তুলে ধরতে চাই।
জাবির ইবনে হাইয়ান
সর্বপ্রথম নাইট্রিক অ্যাসিড
আবিস্কার, সালফিউরিক অ্যাসিড আবিস্কার, ও নাইট্রিক এসিড স্বর্ণ গলানোর ফর্মুলা আবিষ্কারের
একমাত্র জনক হল মুসলিম বিজ্ঞানী জাবির ইবনে হাইয়ান। স্বর্ণ গলানোর পদার্থের নাম ”অ্যাকোয়াবিজিয়া”
নামটি তার দেয়া। তিনি চামড়াও কাপড়ে রং করার প্রণালী, ইস্পাত প্রস্তুত করার পদ্ধতি
ওয়াটার প্রুফ কাপড়ে বার্নিশ করার উপায় আবিষ্কারের
জনক। এছাড়াও তিনি স্বর্ণ ও পরশ পাথর তৈরি করতে পারতেন। অন্য ধাতুর সঙ্গে মিশ্র স্বর্ণকে
কুপেলেশনপদ্ধতিতে বিশুদ্ধ করার পদ্ধতি ও তার আবিষ্কারক।এর বাহিরে তিনি চিকিৎসাশাস্ত্র,
দর্শন, যুক্তি বিদ্যা, রসায়ন, জ্যামিতি, জ্যোতির্বিদ্যা
জ্যোতির বিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞান ও কাব্য সম্পর্কে 2000 এর বেশি গ্রন্থ রচনা করেন।
ইবনুন নাফিস
মানবদেহে রক্ত সঞ্চালনের
ব্যবস্থা, শ্বাসনালী আভ্যন্তর অবস্থা, মানবদেহে বায়ু ও রক্ত প্রবাহের মধ্য ও ক্রিয়া
প্রক্রিয়ার ব্যাপার, ফুসফুসের নির্মাণ কৌশল আবিষ্কার করেন এই মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানী।
রক্ত চলাচল সম্বন্ধে তৎকালীন প্রচলিত গ্যালন
এর মতবাদকে ভুল প্রমাণিত করে চিকিৎসা বিজ্ঞানে 13 শতক শতাব্দীর বিপ্লবের সূচনা করেন
তিনি। চিকিৎসা বিজ্ঞান ছাড়াও তিনি সাহিত্য, আইন, ধর্ম লজিক শাস্ত্রের অগাধ পাণ্ডিত্য
অধিকারী ছিলেন।
আল বাত্তানী
এই মুসলিম মনীষী 20 বছর
বয়সেই শ্রেষ্ঠ জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও পন্ডিত হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হন।
তিনি ছিলেন একজন অংক শাস্ত্রবিদ ও জ্যোতিবিজ্ঞানী। চন্দ্র সূর্য গ্রহ নক্ষত্র প্রভৃতির
প্রকৃতি ও সম্বন্ধে তার সঠিক তথ্য শুধুমাত্র অভাবনীয়ই বরং জ্যোতির্বিজ্ঞানী টমেলি সহবহু বিজ্ঞানের ভুলো তিনি সংশোধন করেন।
আল বাত্তানীই সর্বপ্রথম
আবিষ্কার করেন যে, ত্রিকোনমিতি একটি স্বয়ং স্বাধীন বিজ্ঞান। তার সংস্পর্শের নির্জীব
ত্রিকোণমিতিক হয়ে ওঠে। সাইন, কোসাইনের সঙ্গে ট্যানজেস্টের সম্পর্ক ও তার আবিষ্কার।
আল বেরুনী
অধ্যাপক মাপা বলেন- আল
বেরুনী শুধু মুসলিম বিশ্বের ওই নয় বরং তিনি ছিলেন সমগ্র বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী
ব্যক্তি। ত্রিকোণমিতিতে তিনি বহু তথ্য আবিষ্কার করেছে। কোর্পা নিকাস বলেছে- পৃথিবীর
সহ গ্রহ গুলো সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। অথচ কোর্পানিকাস এর জন্মের 425 বছর পূর্বে আল
বেরুনী বলেছেন- বৃুত্তিক গতিতে পৃথিবী ঘুরে ।তিনি টামেলি ও ইয়াকুবের দশমিক অংকের ভুল
ধরে তার সংশোধন করেন। তিনি সর্বপ্রথম প্রাকৃতিক ঝর্ণা এবং আর্টেসিয় কূপের রহস্য উদঘাটন
করেন। তিনি এরিষ্টটলের হেবের গ্রন্থের 10 টি ভুল আবিষ্কার করেন। ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের
সম্পর্ক তার আবিষ্কার। শুদ্ধ গণনায় আলবেরুনী একটি বিস্ময়কর পন্থা আবিষ্কার করেন যার
বর্তমান নাম দা ফর্মুলা অফ ইনফর্মেশন।
ইবনে সিনা
মাত্র 17 বছর বয়সে সকল বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে।
19 বছর বয়সে তিনি বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, অর্থনীতি, রাজনীতি গণিতশাস্ত্র, জ্যামিতি, ন্যায়
শাস্ত্র, চিকিৎসা শাস্ত্র ইত্যাদিতে মহা পাণ্ডিত্য অর্জন করে। একুশ বছর বয়সে তিনি
আল মজমুয়া নামক একটি বিশ্বকোষ রচনা করেন। পানি ও
ভূমির মাধ্যমে যে সকল রোগ ছড়ায় তা তিনি আবিষ্কার করেন। তার লেখা আল কানুন
5 টি বিশাল খন্ডে বিভক্ত পৃষ্ঠা সংখ্যা চার লাখেরও বেশি, খেতে শতাধিক জটিল কারণ ও সমাধানের
বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া হয়। প্রকৃতপক্ষে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হল ইবনে সিনা
।
ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি
ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি
আলাইহি সর্বপ্রথম ইসলামী জ্ঞান, বিজ্ঞান,
দর্শন, ও সাহিত্যে ইসলামের পুনর্জাগরণ ঘটিয়েছেন। এছাড়াও অংক শাস্ত্র ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী
ছিল তার বিশেষ আগ্রহ। এ সম্পর্কে তাঁর বিষয় ছিল ম্যাজিক স্কয়ার। সাবিত ইবনে কোরা
ও ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি ব্যতীত ম্যাজিক স্কয়ার মুসলিম বৈজ্ঞানিকদের মনোযোগ আকৃষ্ট
করতে পারেনি। তিনি নক্ষত্রাদির গতি ও প্রকৃতি সম্বন্ধে বই রচনা করেন।
ইবনে খালদুন
মাত্র ১৫ বছর বয়সে সে
কুরআনের তাফসীর শিক্ষা শেষ করেন। দর্শন, রাজনীতি,
অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান ইতিহাস ইত্যাদি বিষয়ে ছিলেন তিনি সেরা পন্ডিত। তিনি
বিখ্যাত আল মুকাদ্দিমা বইটি রচনা করেন। কিতাবের মাধ্যমে তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ সমাজবিজ্ঞান,
ওই ও দার্শনিক সুখ্যাতি অর্জন করেন। আল মুকাদ্দিমায় তিনি যে মৌলিক চিন্তা ধারার পরিচয়
দিয়েছেন তা পৃথিবীতে আজও বিরল। তিনি সমাজবিজ্ঞান ও বিবর্তনবাদ সম্পর্কে অনেক নতুন
নতুন তথ্য আবিষ্কার করেন। ইতিহাস সম্পর্কে তাঁর লেখা কিতাব আল ইবর বিশ্বে প্রথম এবং সর্ব বৃহৎ ইতিহাস গ্রন্থ।
ওমর খৈয়াম
ইউরোপিয়রা অত্যন্ত কৌশলে
এ মহামনীষী কে বিশ্ব বিখ্যাত একজন বিজ্ঞানীর পরিবর্তে কেবলমাত্র একজন কবি হিসেবে পৃথিবীর
মানুষের কাছে পরিচিতি করার চেষ্টা করেছেন। ওমর খৈয়ামের সর্বাধিক অবদান আলজাবরা অর্থাৎ
বীজগণিত। জ্যামিতি সমাধান বীজগণিত এবং বীজগণিত সমাধানে জ্যামিতি পদ্ধতির আবিষ্কারক
তিনি।ভগ্নাংশ সমীকরণের উল্লেখ্য ও সমাধান করে তিনি সর্বপ্রথম বীজগণিতে এক নতুন অধ্যায়ের
সূচনা করেন। বীজগণিত এর ক্ষেত্রে বাইনোমিয়াল থিউরিয়াস এর জনক তিনিই। অথচ ইবনে খালদুনের
শতশত বছর পর বাইনোমিয়াল থিউরিয়াস কার বলে নিউটন আজও পৃথিবীতে বিখ্যাত। গণিত জগতে
এলালিটিক জিওমেট্রিক কল্পনা তিনি সর্বপ্রথম
করেন। এছাড়াও তিনি একটি নতুন গ্রহ আবিষ্কার করেন। তিনি আরও ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী,
চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও বিশ্ব বিখ্যাত কবি। কিন্তু মুসলিম জাতি আজও তার সম্পর্কে পুরোপুরি
জানেনা।
ইবনে রুশদ
তিনি দর্শন, ধর্মতত্ত্ব,আইন,
জ্যোতির্বিজ্ঞানী, ব্যাকরন ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর বহু বই রচনা করেন। তিনি গোলকের
গতি সম্পর্কে একটি বই রচনা করেন ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর ২০টি বই রচনা করেন। তিনি কিতাব
আল কল্লিয়াতি ফিত ত্বীব বইটিতে অসংখ্য রোগের নাম লক্ষণ ও চিকিৎসা প্রণালী বর্ণনা করেন।
এছাড়াও ইবনে রুশদ সংগীত ও ত্রিকোণমিতিতে অনেক বই রচনা করেন।
এছাড়াও আরো অনেক মুসলিম মনীষী অন্যান্য অনেক খাতে বিশেষ বিশেষ
অবদান রেখেছেন যা আমরা আমাদের অজ্ঞতা ও না জানার দরুন এবং সংরক্ষণ ও গবেষণা মূলক প্রতিষ্ঠান
অভাবে এসব মুসলিম মনীষীদের নাম ধীরে ধীরে ইতিহাস থেকে মুছে যাচ্ছে। যার কারনে দিন দিন
লোপ পাচ্ছে এবং বিলুপ্ত হচ্ছে মুসলিম মনীষীদের স্বর্ণ গাঁথা ইতিহাস গুলো ।
ইসলাম সম্পর্কে নিত্যনতুন আরো অনেক ঘটনা ও ইতিহাস সম্পর্কে জানতে
আমাদের এই ব্লগের সাথেই থাকুন।