কোন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার পিতা-মাতা, এবং তার সন্তান ও সমস্ত মানুষ থেকে আমাকে বেশি মোহাব্বত করবে। {সহীহ বুখারী শরিফ, হাদীস নং-১৫, সহীহ মুসলিম শরিফ, হাদীস নং-১৭৭}

Wednesday, December 14, 2016

A Nice History Of King Of Yemen || History Based Islamic Story.



“তুব্বে আউয়াল হোমাইরি” নামে ইয়ামানের এক বাদশাহ ছিলেন । ঘটনাটি হুজুর পাক সাললাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর আগমনের প্রায় একহাজার বছর আগের কথা । ত তিনি তার নিজ রাজ্য ভ্রমন করার জন্য একদিন বিশাল বাহিনী নিয়ে বের হলেন । তার সাথে বার হাজার আলেম ও হেকিম, এক লক্ষ বত্রিশ হাজার অশ্বারোহী দল আর এক লক্ষ তের হাজার পদাতিক সৈন্য । এক বিশাল শান ও ঐশর্য্য নিয়ে বের হয়েছিলেন যে তার এই বিশাল বাহিনীকে দেখার জন্য চারিদিক থেকে লোক এসেছিল দেখার জন্য । ত এক পর্যায়ে রাজ্য ঘুরতে ঘুরতে যখন মক্কার কাছাকাছি চলে আসলেন তখন দেখা গেল যে, কোন লোকই আর তার এ বিশাল বাহিনীকে দেখার জন্য আসল না । এ ধরনের আশ্চর্যাজনক ঘটনা দেখে বাদশাহ নিজেই অবাক হয়ে গেলেন এবং তার উজিরকে জিজ্ঞেস করলেন কি ব্যাপার এমন হওয়ার কারণ কি ? তখন তার উজির জবাব দিল যে, এই শহরে বাইতুল্লাহ নামে আল্লাহর একটি ঘর আছে । এখানে কাছে ও দূর-দূরান্ত থেকে অনেক লোক আসে এই ঘরকে জিয়ারত করতে । এই ঘরের খাদেম ও এই শহরের বাসিন্দাগণ দুনিয়াবাসীর কাছে আপনার এই বিশাল বাহিনীর শান-শওকতের চাইতেও অধিক সম্মানিত, তাই তাদের আপনার এই দলের প্রতি কোন ইচ্ছা বা আকর্ষণ নেই । এই কথা শুনে বাদশাহ মারাত্মকভাবে ক্ষেপে গেলেন এবং উজিরকে বললেন যে আমি এই ঘর ও গরের মানুষদেরকে ধুলিৎসাত করে দিব । এই কথা বলার সাথে সাথে তার নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত ও পঁচা পুঁজ বের হতে লাগল । অবস্থা এমন দাঁড়াল যে, গন্ধ ও পুজের জন্য তার আশে-পাশে থাকা যেত না । ত অনেক চিকিৎসা, কবিরাজী, হেকিমী করেও তার এই রোগের আরোগ্য করা গেল না । তারপর এক সন্ধ্যায় উনারই দলের এক বড় আলেম উনার নাড়ী দেখে বললেন হুজুর আপনার অসুখটা জটিল, কিন্তু চিকিৎসা খুবই সহজ । তিনি বললেন বাহশাহ হুজুর, আপনি যদি মনে কোন খারাপ ধারণা পোষণ করে থাকেন তবে তা শুদ্ধ করে নিন । এই খারাপ ধারণাই আপনার এই জটিল রোগের কারণ । অতঃপর বাদশাহ তার সেই মক্কা ও মক্কার অধিবাসিদের প্রতি যে খারাপ মনোভাব উদয় হয়েছিল তা থেকে সে তওবা করে নিল আর অমনি তার এই জটিল রোগ সেরে গেল । বাদশাহর আর বুঝতে বাকী রইল না যে সে মক্কা কত মহামান্বিত ও পবিত্র ।
এরপর বাদশাহ আরোগ্য লাভ করায় খুশি হয়ে মক্কায় মানে বায়তুল্লাহ শরীফে একটি রেশমী কাপড়ের গিলাফ চড়িয়ে দেন । আর মক্কার বাসিন্দাদেরকে সাতটি করে স্বর্ণমুদ্রা ও সাত জোড়া করে রেশমী কাপড় উপহার দেন ।

তারপর বাদশাহ তার আলেমদের মধ্যে যারা আসমানী কিতার সম্পর্কে অধিক জ্ঞানী ছিলেন তাদেরকে নিয়ে তিনি মদিনায় অবস্থান করলেন । উক্ত আলেমগন আসমানী কিতাবের সাথে মিল রেখে সেখানকার মাটি, আবহওয়া ইত্যাদি পরিক্ষা-নীরিক্ষা করে আমদের নবী হজরত মোহাম্মদ সাললাল্লাহু আলাইহে ওয়সাল্লাম এর আগমনের জায়গার আলামতের মিল পেলে সেখানে চিরদিনের জন্য থেকে জন্য শপথ করে নেন । তারা বলেন যে, আমরা এখানে মৃত্যু অবধি অবস্থান করব যদি আমাদের কিসমত ভাল হয় তবে আমরা উক্ত শেষ পয়গম্বরের সাক্ষাত পাব । আর যদি তা না হয় তবে কোন এক সময় আমাদের কবরে  হয়ত তাঁর (দরূদ) এর পত্রি জুতার ধূলি আমাদের কবরের উপর এসে পড়বে আর আমাদের নাজাতের জন্য এটাই যথেষ্ট হবে । বাদশাহ আলেমদের এ ধরণের সিদ্ধান্ত দেখে তাদের থাকা-খাওয়ার জন্য জন্য ৪০০ ঘর ও প্রচুর অর্থ সহায়তা দেন । আর সবচেয়ে বিদ্ধান আলেমের ঘরের কাছে ২তলা বিশিষ্ট একটি উন্নত মানের ঘর বানান এবং আলেমদের বলেন যে এই ঘরটা আমি আল্লাহর পেয়ারা হাবিবের জন্য বানিয়ে দিলাম যেন এটাকে তিনি আরামের জন্য ব্যবহার করতে পারেন । অতঃপর তিনি হুজুর পাক রাসূল সাললাল্লাহু আলাইহে ওয়াল্লাম বরাবর একটা চিঠি লিখলেন এবং সকল আলেমদের কে অনুরোধ জানালেন যে, তার এই চিঠি যেন রাসূল পাক (দরূদ) এর কাছে পৌছে দেয় । আর যদি তারা রাসূল (দরূদ) এর সাক্ষাত না পান তবে তাদের বংশদেরকে যেন ওছিয়ত করে যায় এই চিঠিখানা যেন রাসূল (দরূদ) এর আগমন অবধি পালাক্রমে হেফাজত করে রাখে এবং হুজুরের থেদমতে সমীপে পেশ করা হয় ।

বাদশাহ ত চলে গেলেন । যাই হোক উনার এই চিঠি এক হাজার পর যখন হুজুর পাক সাললাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আসেন অতঃপর যখন তিনি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করলেন তখন এ চিঠি ইনার খেদমতে পেশ করা হয় ।
যাই হোক ঘটনার সংক্ষেপ হল বাদশাহের এ চিঠি এক হাজার বছর পর সেই স্বনামধন্য আলেমের বংশধরদের ওছিয়তের হাত ধরে ধরে শেষে সাহাবী হযরত আবু আইয়ুব আনছারী (রা.) এর কাছে গিয়ে পৌছায় । হুজুর পাক সাললাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতে যান তখণ মদিনার লোকেরা পাগলপ্রায় হয়ে স্বাগতম জানানোর জন্য জমায়েত হতে থাকে এবং একেক সাহাবী স্ব স্ব ঘরে তাশরীফ নেয়ার জন্য অুরোধ করতে থাকে । অবস্থা এমন দেখে হুজুর পাক সাললাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন ঠিক আছে আমার উটের লাগাম ছেড়ে দেয় হল সে যেথায় গিয়ে দাঁড়াবে এবং বসবে সেটাই হবে আমার অবস্থান ।অতঃপর উট গিয়ে থামল হুজুর পাক সাললাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর জন্য তৈরী করে দেয়া দোতলা বিশিষ্ট বাদদশাহের সেই আরামঘরের সামনে গিয়ে থামে । তখন এ ঘরটি সাহাবী হযরত আবু আউয়ুব আনছারী (রা.) এর আওতায় ছিলো । বাদশাহের সেই চিঠিটা আনছারী (রা.) তার গোলাম আবু লাইলার কাছে হেফাজত করে রাখেন । চিঠিটা উনাকে আনতে বলা হলে তিনি চিঠি নিয়ে হুজুর পাক রাসূল সাললাল্লাহু আলাইহে ওয়াল্লাম এর সামনে আসতেই হুজুর পাক রাসূল সাললাল্লাহু আলাইহে ওয়াল্লাম বললেন তুমি আবু লাইলা না ? বিস্মিত আবু লাইলা কিছু বলার আগেই হুজুর পাক রাসূল সাললাল্লাহু আলাইহে ওয়াল্লাম আবার বললেন যে, আমি মোহাম্মদ রাসূলুল্লাহ ! ইয়ামানের বাদশাহের সেই চিঠিটা যেটা তোমার হেফাজতে আছে সেটি নিয়ে আস । তারপর হুজুর পাক রাসূল সাললাল্লাহু আলাইহে ওয়াল্লাম সেই চিঠিখানা পড়লেন । যাতে লিখা ছিল এরূপ :-

অধম বান্দা তুব্বে আউয়াল হোমাইরির পক্ষ থেকে শাফীউল মুযনাবীন সৈয়্যদুল মুরসালীন রাসূল সাললাল্লাহু আলাইহে ওয়াল্লাম এর প্রতি । হে আল্লাহর হাবীব, আমি আপনার উপর ঈমান আনতেছি এবং আপনার প্রতি যে কিতাব নাযীল হবে সেটার উপরও ঈমান আনতেছি । আমি আপনার ধর্মের উপর আস্থাশীল । অতএব যদি আপনার সাথে সাক্ষাতর সুয়োগ হয় তাহলে খুবই ভাল এবং সৌভাগ্যর বিষয় হবে । আর যদি আপনার সাক্ষাত নসীব না হয়, তাহলে আমার জন্য মেহেরবাণী করে শাফায়ত করবেন এবং কেয়ামত দিবসে আমাকে নিরাশ করবেন না । আমি আপনার প্রথম উম্মত এবং আপনার আর্বিভাবের আগেই আপনার বায়াত করছি । ’আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ এক এবং আপনি তার সত্যিকার রাসূল ।’


চিঠি পড়া শেষ হলে নবী  হুজুর পাক রাসূল সাললাল্লাহু আলাইহে ওয়াল্লাম বললেন যে, নেক বান্দা তুব্বে আউয়ালকে অশেষ মোবারকবাদ --

0 comments:

Post a Comment